ঢাকা: বিগত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি বরং বিএনপি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে এই অপরাধীর তকমা থেকে তারা নিষ্কৃতি পাবে না বলেও তিনি জানান।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সচিবালয়ে তাঁর নিজ দপ্তরে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ সব কথা বলেন। এ সময় তিনি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দাবি নির্বাচনে অংশ না নিলে এর প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়ে কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন এবং এর জন্য গঠিত সার্চ কমিটি বিএনপির গ্রহণ না করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গ্রহণ করেনি, বিএনপি বাংলাদেশের কোনো ভালো জিনিস গ্রহণ করেছে এ রকম কোনো উদাহরণ নেই। বরঞ্চ ভালো জিনিস নষ্ট করা বিএনপির কাজ। এই দেশটাকে তো নষ্ট করেছে জিয়াউর রহমান। প্রথম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের সমাজে, রাজনীতিতে এনেছেন, ইতিহাস বিকৃত করেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্র, সন্ত্রাস ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
বিএনপি সার্চ কমিটির বিরোধীতা এবং এই সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছে সেটাও বিএনপি পাঠাবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে এ অবস্থায় নতুন নির্বাচন কমিশনে নিয়ে কোনো নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে কি না জানতে চাওয়া হলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে, বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা থাকবে কি না সেটাই হচ্ছে বিষয়। ইতোমধ্যে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে গেছে নেতিবাচক রাজনীতির কারণে। অতএব এই জায়গা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে তাদেরকে ইতিবাচক পথে হাঁটতে হবে। এই যে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তারা অপরাজনীতি করলো একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে। আরেকটু হলে তো তারা খালেদা জিয়াকে ডেড বডিতে পরিণত করতো। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে যে সন্তান রাজনীতি করে, যে দলের নেতাকর্মীরা রাজনীতি করে সেই দলের কাছে আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে!
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর সংবিধানের কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না। বাংলাদেশের সংবিধান বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ক্ষতবিক্ষতই শুধু করা হয়নি স্থগিত করা হয়েছে, যে যার মতো করে চালিয়েছে। এখন দেশে একটা ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে। বিএনপি চায় এই ধারাবাহিকতাটাকে থামিয়ে দিতে।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার তো দাফন কাফন হয়ে গেছে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আর কোনো আলোচনার বিষয় নাই। জনগণের কাছে এটা কোনো বিষয় না, তাদের দাবি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। পেলে তো বিএনপি অনেক কিছুই করতে পারতো। বিএনপি বলছে এটা না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা তো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবং যে সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতি তারা করছে সেটা দিয়ে কি দেশের অগ্রগতি থামাতে পেরেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তো আমরা মিলেনিয়াম গোল(জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা) অর্জন করেছি।
কাজেই ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না আসাতে বাংলাদেশের কি কোনো ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি না আসে তাহলে তাদের এই অপরাধের ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে। এই অপরাধীর তকমা থেকে তাদের নিস্কৃতি পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচন যথা সময়েই হবে। নির্বাচন হবেই, এটাই বাস্তবতা, নির্বাচন তো হচ্ছেই। আমাদের বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটা ঘন বসতিপূর্ণ দেশ, সেরকম একটি দেশে আমরা আইন-শৃঙ্খলা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা, খাদ্যের নিশ্চয়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সবকিছু নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এটা কিছু মানুষের পছন্দ হয় না। এই জন্য তারা চিন্তা করছে, একটা প্রচারণা চালাচ্ছে যে নির্বাচনে তৃতীয় শক্তি বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে করা হোক।
বিদেশে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি সম্প্রতি বেশ আলোচিত, এটাকে কীভাবে দেখছেন-
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমেরিকায় কিন্তু লবিস্ট একটা বৈধ পন্থা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক হয়।
এর জন্য পেমেন্ট দিতে হয়। বিভিন্ন দেশ আমেরিকার লবিস্টদের নিয়োগ করে তাদের কল্যাণের জন্য, সার্বিক উন্নয়নের জন্য, মানব জাতির অগ্রগতির জন্য। বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে একটা দেশকে ধ্বংস করার জন্য। একটা দেশের অগ্রগতির চাকা থামিয়ে দেওয়ার জন্য। বিএনপি নেতারা এতো পরনির্ভরশীল হয়ে গেছে, বিদেশ নির্ভর হয়ে গেছে যে বাংলাদেশের কোনো কিছুই তাদের পছন্দ না, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে সে কারণে তারা এখন বিদেশ নির্ভর রাজনীতি করছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কী?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ডেফিনেটলি, নির্বাচনই তো একটা চ্যালেঞ্জ। কাজেই সব কিছু স্বাভাবিক রেখে একটা নির্বাচন করা এটা নির্বাচন কমিশনের যেমন চ্যালেঞ্জ, সেই সময় যারা সরকারের দায়িত্বে থাকবে তাদেরও একটা চ্যালেঞ্জ। আমি আশা করি দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ থাকবে সেই চ্যালেঞ্জে সরকার বা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে। এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাওয়া তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় যেভাবে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, জ্বালিয়ে দেওয়া, ভোটকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে, ভোটারদেরকে হত্যা করা হয়েছে, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যা, জ্বালিয়ে দেওয়া, স্থাপনাকে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেইগুলোকে নিবৃত্ত করাটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ, সেটাকে নিবৃত্ত করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি রাখাটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ।
করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের যা যা করার আমরা তো করেই যাচ্ছি। আমরা এইগুলো করছি বলেই দেশে আজকে মাথাপিছু আয় ২৬০০ ডলারে চলে গেছে। রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। দেশের মানুষ এই করোনার মধ্যেও সব কিছু মিলিয়ে ভালো আছে। আমরা আমাদের অর্থনীতি ধরে রাখতে পারছি। করোনার মধ্যেও আমাদের মেজর প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। কাজেই আমরা তো এগিয়ে যাচ্ছি।
সবশেষে তিনি সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের পক্ষে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২
এসকে/এসআইএস