ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কেমন চলছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২২
কেমন চলছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল

ঢাকা : দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা ১৪ দলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জোটের প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

এতে জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়ছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকায় এ জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা চলছে। জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের অনাগ্রহের কারণেই ১৪ দল নিষ্ক্রিয় বলে শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের অভিযোগ। আর এই নিষ্ক্রিয়তার জন্য তারা আওয়ামী লীগের একলা চল নীতিকে দায়ী করছেন।  

জোটকে সক্রিয় না করায় এ নিয়ে ১৪ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভও রয়েছে। অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় তাদের এই হতাশা ও ক্ষোভ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।

১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং বিএনপি-জামায়াতের লুটপাট, দুনীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৪ দল গড়ে ওঠে। এক সঙ্গে আন্দোলন, এক সঙ্গে নির্বাচন এবং ২৩ দফার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার অঙ্গিকার করেই ১৪ দলের যাত্রা শুরু হয়।  

কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ একলা চল নীতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এর মধ্যে জোটের তিনটি দলকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমঝোতা করে কয়েকটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য দুই একটি দলকে সংসদে সংরক্ষিত আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় বারের সরকারের প্রথম টার্মে ১৪ দল থেকে এক জন এবং দ্বিতীয় টার্মে এ জোট থেকে তিন জনকে মন্ত্রী করা হয়। কিন্তু জোটের অন্য শরিক যারা রয়েছে তারা উপেক্ষিতই থেকেছে বলেও তাদের অভিযোগ। এ নিয়ে ওই দলগুলোর নেতাদের মধ্যে হতাশা ও চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সৃষ্ট সংকটে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক হওয়ায় ১৪ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন পর গত ১৫ মার্চ ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ১৪ দলকে সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও উল্লেখ্যযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে ১৪ দল নেতারা জানান।

এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, গত বৈঠকে পর ১৪ দলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। একই অবস্থা চলছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত দেখছি। বলা হয়েছে আগামী নির্বাচনও ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নেবে। কিন্তু তার তো কোনো আলামত দেখছি না। আমরা দ্রব্যমুল্য কমাতে বলেছি কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, আর কত বলবো।  

এদিকে ১৪ দল থেকে ইতোমধ্যেই বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ জাসদ। গত কয়েক বছর আগে জাসদ (ইনু) ভেঙে দলটির নেতাকর্মীদের একটি অংশ শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাসদ গঠন করে। এরপর দলটি ১৪ দলের সঙ্গে থাকলেও গত প্রায় দুই বছর জোটে নিষ্ক্রিয়। সম্প্রতি দলটি ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে। গত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকে বাংলাদেশ জাসদ ছিলো না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, যে উদ্দেশ্যে ১৪ দল হয়েছিলো জোট সেই জায়গায় নেই। দীর্ঘদিন জোট নিষ্ক্রিয়, সেখানে থেকে লাভ কি। আমরা অনেক দিনই ১৪ দলের নেই। প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন আমরা সেখানে যাইনি।

তবে এ জোটের অন্য শরিকদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ থাকলেও ১৪ দলের ঐক্যকে ধরে রাখার পক্ষে জোট নেতারা। তাদের মতে, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জঙ্গি গোষ্ঠী এখনও সক্রিয়। বিভিন্নভাবে এই শক্তি দেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করা, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। কখনও কখনও তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই শক্তিকে প্রতিহত করা এবং এদের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১৪ দলের ঐক্যকে ধরে রেখে তা অগ্রসর করার কোনো বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, যে পরিস্থিতিতে ১৪ দল গড়ে উঠেছিলো তার প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়নি। সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জঙ্গিগোষ্ঠী এখনও নানাভাবে চেষ্টা করছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১৪ দলের বিকল্প নাই। ১৪ দলের ঐক্যকে ধরে রেখে তাকে অগ্রসর করতে হবে।  

এ বিষয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এখন তো দেশে রাজনীতি নেই, ষড়যন্ত্রের খেলা চলছে। এক পক্ষ চাইছে ষড়যন্ত্র করে সরকার হটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। আমরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বিরুদ্ধে। যে সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১৪ দল গড়ে উঠেছিলো সেই ২৩ দফার ভিত্তিতে জোটের ঐক্য ধরে রেখে এগিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময় ২১১৭ ঘন্টা, মে ১৩, ২০২২
এসকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।