ঢাকা: নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে মানুষ ভোট দিতে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ ।
দেশের মানুষ এখন ভোটবিমুখ হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ২০দলীয় জোটের আগে বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল তার পিতা সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুরের। এরপর দীর্ঘদিন ২০দলীয় জোটে থাকার পর নানা কারণে ২০১৯ সালের ৬ মে ২০দলীয় জোট ছাড়ে বিজেপি। এখন নিজেদের দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানান পার্থ।
সোমবার (২৩ মে) বারিধারার নিজ বাসায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বাংলানিউজ: ২০দলীয় জোট ছেড়ে এখন নতুন করে কী ভাবছেন?
পার্থ: আমরা সাংগঠনিক কাজ করছি। ঢাকা মহানগর ঠিক করেছি। অনেক বছর জোটে থাকার কারণে নিজের কাজ স্থবির হয়েছিল। গত দুই-আড়াই বছরে সব জেলায় কমিটি করেছি। ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের সব কমিটি নতুন করে করেছি। সাংগঠনিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত আছি।
বাংলানিউজ: ইদানিং সরকারবিরোধী নতুন নতুন জোট হচ্ছে। আপনি কী ২০দলীয় জোটে আবার যোগ দেবেন নাকি নতুন কোনো জোটের সঙ্গে যাবেন?
পার্থ: না, আপাতত এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। ২০দলীয় জোটেও যাচ্ছি না।
বাংলানিউজ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোনো জোটে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিনা?
পার্থ: নির্বাচনতো এখনও অনেক সময় বাকি। এখনই এ বিষয়ে চিন্তা করছি না। সময় আসুক তখন দেখা যাবে।
বাংলানিউজ: আপনার পুরনো শরিক ২০দলীয় জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছে। সেই আন্দোলনে আপনি কি একাত্মতা প্রকাশ করবেন?
পার্থ: বিএনপিতো অনেকবার বলেছে আন্দোলন করবে। আগে তারা শুরু করুক। দেখা যাক সেই আন্দোলন তারা কতটা বেগবান করতে পারে। তারপরে এটা নিয়ে চিন্তা করবো।
বাংলানিউজ: সম্প্রতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতীয় সরকারের একটি ফর্মুলা দিয়েছেন। এটা নিয়ে কিছু বলেন।
পার্থ: ডা. জাফরুল্লাহ সাহেব কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। উনি ব্যক্তি হিসেবে দিতেই পারেন। ওনার ব্যক্তিগত মত উনি দিয়েছেন, যেটা ভালো মনে করেছেন। উনি নিজের মত থেকে ওনার পছন্দের কয়েকজনের নাম দিয়ে দিয়েছেন। আমার মনে হয় না যে রাজনৈতিকভাবে এটার তেমন গুরুত্ব আছে।
বাংলানিউজ: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে একটা অনুষ্ঠানে জাতীয় সরকারের বিষয়ে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। উনি বলেছেন, আগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তারপর যারা বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে থাকবে তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
পার্থ: সেটাতো একটা রাজনৈতিক প্রস্তাব হিসেবে আমি পজিটিভলি (ইতিবাচক) দেখছি। বিএনপি অবশ্যই চাইবে এই সরকারের অধীনে যাতে কেউ নির্বাচনে না যায়। না গেলে সেক্ষেত্রে সবাইকে সম্মানজনক জায়গায় রাখা হবে। আমি মনে করি এটা পজিটিভ পলিটিক্স।
বাংলানিউজ: তারেক রহমানের এই জাতীয় সরকারের বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের নেতারা রাজনৈতিক ভাওতাবাজি হিসেবে দাবি করেছেন।
পার্থ: বিএনপি যা বলবে তার জবাবে আওয়ামী লীগতো এ ধরনের কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমার কাছে (তারেক রহমানের ফর্মুলা) এ বিষয়টি পজিটিভই মনে হয়েছে।
বাংলানিউজ: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। যেটা দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
পার্থ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যটা আমি দেখেছি। উনি ওনার ক্ষোভ থেকে বলেছেন। ড. ইউনূসের প্রতি ওনার ক্ষোভ আছে সেখান থেকে বলেছেন। আমরা বিরোধী দলে থেকে সরকারের বিষয়ে নানা কথা বলি। আমরা কী মূল্যায়ন করি না করি সেটা মুখ্য বিষয় নয়। জনগণ কীভাবে মূল্যায়ন করে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। আমার মনে হয়, সামনে নির্বাচন আসছে। রাজনীতি অনেকটা নির্বাচন কেন্দ্রিক। নির্বাচনটা কীভাবে ভালো করা যায় সেদিকে সবার মনোযোগ দেওয়া উচিত।
বাংলানিউজ: সবকিছু যদি নির্বাচন কেন্দ্রিক হয় তাহলে বিএনপিরতো একটা দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আপনি কী মনে করেন এই দাবি বিএনপি আদায় করতে পারবে?
পার্থ: বিএনপি দাবি আদায় করতে পারবে কী পারবে না সেটা পরের কথা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এটা আসলে বিএনপির দাবি না এটা এখন বাংলাদেশের জনগণের দাবি। জনগণ যদিও রাস্তায় নামে না, কিন্তু জনগণ এটা বুঝে গেছে যে দলীয় সরকারর অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এমনকি বিএনপিও যদি নির্বাচনে যেতে চায় সেক্ষেত্রেও দেখা যাবে ওই নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। মানুষ ভোট দিতে যাবে না। আমরা গতবারও দেখেছি মানুষ ভোট দিতে যায় না। ভোটবিমুখ হয়ে গেছে। বিএনপি গেলেই যে মানুষ ভোট দিতে যাবে সেই ধারণাও ঠিক না। জনগণের কাছ থেকে ভোটের জিনিসটা উঠে গেছে। এটা আওয়ামী লীগ কেন বুঝতে পারছে না, নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছে, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটা এখন আর বিএনপির দাবি না, জনগণের দাবি। যদি ভোট হয়, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। তাহলে মানুষ ভোট দিতে যাবে।
বাংলানিউজ: আমরা জানি পারিবারিকভাবে আপনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারাও জোট করবে। সেই জোটে যদি আপনার ডাক আসে তাহলে কী করবেন?
পার্থ: না, আমি একজন রাজনীতিবিদ। সেই পরিচয়টা দিতেই আমি পছন্দ করি। প্রধানমন্ত্রী আত্মীয়, ১৫ বছরে অনেক কিছু হয়ে গেছে। কতকিছু করেছেন। ব্যালেন্স করলেতো আমি এখন এমপি, মন্ত্রী থাকতাম। আমিতো সেটা করিনি।
বাংলানিউজ: যেহেতু আপনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট ছেড়ে দিয়েছেন, এখন যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো অফার আসে তাহলে কী করবেন?
পার্থ: শোনেন, আমি একটা কথা বলি, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কী করবে সেটা সেই সময়ে বলা যাবে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও সে ধরনের কোনো আভাস পাইনি। সেটা তখন দলীয়ভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা এখন আওয়ামী লীগ বা বিএনপির দিকে যাওয়ার পক্ষে না, আমরা এখন দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত। আমরা চাই যাতে আগামীতে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২২
এমএইচ/এসআইএস