ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আপনি কি অপরাধ করেননি, প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন মোশাররফের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
আপনি কি অপরাধ করেননি, প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন মোশাররফের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভে বক্তব্য দেন বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি অপরাধ করেননি- প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সম্প্রতি ‘আমি কি অপরাধ করেছি যে আপনারা বলেন আমাকে নামিয়ে দেবেন’ সরকার প্রধানের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রশ্ন তোলেন মোশাররফ।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কি অপরাধ করেননি? আপনি গণতন্ত্র হত্যা করেছেন, ভোটাধিকার হরণ করেছেন, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধীদের অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। আপনি কি অন্যায় করেননি?

শনিবার (২৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব প্রশ্ন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রদলের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত’ বলে কটূক্তি করেন স্বয়ং সরকার প্রধান। এ দুই বিষয়ে প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

শেখ হাসিনার ওই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, আপনি মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। ভোটের অধিকার হত্যা করেছেন। দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার জন্য বিডিআর ক্যাম্পে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। এ দেশের মানুষের পকেটের টাকা লুট করার জন্য বিদ্যুতের ইনডেমনিটি দিয়ে দাম বৃদ্ধি করেছেন। কি অন্যায় করেন নাই? আপনাদের এসব অপরাধের জন্য এদেশের মানুষ আর আপনাদের দেখতে চায় না। আজকে এই সরকারের দেশে-বিদেশে সমর্থন শূন্য হয়ে গেছে। তাই শেখ হাসিনার সরকার আজকে একা হয়ে গেছে।

ছাত্রলীগের উদ্দেশে মোশাররফ বলেন, ভালো ছাত্র না হলে তোমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতে না। আজকে কাদের নির্দেশে তোমরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছো। তোমরা কাদের রক্ত নিচ্ছো? ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে তোমরা তোমাদের ভাই, তোমাদের বোনের রক্ত নিচ্ছো। অতীতে তাদের নির্দেশে যারা বিশ্বজিৎ-আবরারকে হত্যা করেছিল তারা তোমাদের নেত্রী ক্ষমতায় থাকতেও রেহাই পায়নি। তোমরাও আগামী দিনে জনতার আদালতে রেহাই পাবে না।

তোমরা বাছাই করা ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছো। আজকের এই গায়ের জোরের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তোমাদেরকে ব্যবহার করছে। তোমাদেরকে দানবে পরিণত করছে। তোমাদের বলতে চাই নেতাদের প্ররোচনায় নিজেদের জীবনকে শেষ করবে না। এখনও তোমাদের সম্বিত ফিরে আসুক। যাদের পেছনে জনগণের সমর্থন নেই, তারা তোমাদেরকে হাতিয়ার বানিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

এ সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই এবং এদেশের মানুষ আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহায়। সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কারণ, সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত সরকারের লোকেরা।  

সরকারকে দুর্বল দাবি করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আজকে দেশের মানুষ এই স্বৈরাচার সরকার থেকে মুক্তি চায়। আজকে এই সরকার অত্যন্ত দুর্বল। একটা ধাক্কা দেওয়া বাকী। আমি বিশ্বাস করি এই ফয়সালা রাজপথে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, রাজপথে ফয়সালা হবে। এই রাজপথ থেকেই আমাদেরকে ধাক্কা দিতে হবে।

এ সময় ছাত্রদলের সাম্প্রতিক আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আমাদের ছাত্রদল ঢাকার রাজপথে তাদের শরীরের রক্ত দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার আন্দোলন শুরু করেছে। আমি আশা করি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সকল অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের পাশে থেকে একই ইস্যুতে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের বিকল্প নেই।

ড. মোশাররফ বলেন, ইস্যু পরিষ্কার। আমাদের আন্দোলন এই সরকারের পদত্যাগ, আমাদের আন্দোলন অবৈধ সংসদ বাতিল, আমাদের আন্দোলনের ইস্যু খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ মুক্তি, আমাদের আন্দোলনের ইস্যু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া। আমাদের আন্দোলনের ইস্যু নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থায় এদেশে একটি নির্বাচন করা। সেই নির্বাচনে জনগণ নিজের হাতে নিজের ভোট দেবে ইভিএমএ নয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের নবনির্বাচিত সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-শফিকুল ইসলাম মিল্টন-গোলাম মাওলা শাহীন। বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, যুব দলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক-ইসহাক সরকার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২২
এমএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।