সিরাজগঞ্জ: রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ভেকু মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
সরকারি জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে দাবি করা হলেও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
এমন অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান গফুর ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান লাভুর বিরুদ্ধে। ভবনটি তৈরি করছিলেন সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঘুড়কা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা। অভিযোগ রয়েছে, ওই ভবন তৈরির সময় তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল।
এসব ঘটনায় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা। অপরদিকে হয়রানি করার উদ্দেশে মামলার বাদী ও সাক্ষীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাল্টা মামলা করা হয়েছে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
এসব বিষয় নিয়ে সলঙ্গা বাজার এলাকায় বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে।
জানা যায়, সলঙ্গা বাজারে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সাড়ে তিন শতাংশ জমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করছিলেন জাকিয়া সুলতানা। ভবনটির একতলা ছাদ কমপ্লিট হয়েছিল। হঠাৎ করে গত ১৪ মে রাতে ভেকু মেশিন দিয়ে এ ভবনটি ভাঙা শুরু করা হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ভেকু মেশিন ফেলে সটকে পড়েন সবাই। তবে ভবন ভাঙার কাজে ব্যবহৃত ভেকু মেশিনটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৬ মে জাকিয়া সুলতানা বাদী হয়ে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান গফুর, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান লাভু, থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ সরকার ও ভেকু মেশিনের চালক সুজন মিয়াকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানোয়ার হোসেন জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক জিয়াসমিন আরা তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে রোববার (২২ মে) সিরাজগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলি) আদালতে সলঙ্গা থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ওই মামলার অন্যতম আসামি রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে আগের মামলার বাদী জাকিয়া সুলতানা ও সাক্ষী জিল্লুর রহমান সরকারকে।
আইনজীবী আব্দুল আজিজ জানান, বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ডিবি পুলিশকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় শ্রমিক ও দোকানিরা জানান, ঘটনার দিন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে ভেকু মেশিন দিয়ে ভবনটি ভাঙা হয়েছে। তবে এসময় অন্য কোনো ভবন ভাঙা হয়নি।
সলঙ্গা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, জিল্লুর রহমান সরকার যেভাবেই হোক সরকারি জায়গা পত্তনী (নির্দিষ্ট খাজনার সর্তে কিছু কালের জন্য গৃহীত) বা লিজ নিয়েছেন। এখানে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, এ কারণে হয়তো ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে এটা আইনগতভাবে প্রশাসনের ভাঙার কথা। যারা ভবন করেছেন, তারা বৈধ আছেন। জমিগুলো পত্তনী বা লিজ যারা দিয়েছেন, তারাই দায়ী।
রিয়াদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, এখানে উৎসুক জনতা ভেকু মেশিন দিয়ে উচ্ছেদ করেছেন। আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম।
ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সরকার বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ওই জায়গায় আমার বাংলা ১৪২৯ সাল পর্যন্ত খাজনা-খারিজ করা আছে। রাস্তার মধ্যে অন্য একজন ঘর তুলে আছে, যা সবাই জানে। তার ঘর না ভেঙে আমার ঘর ভাঙা হয়েছে। যেখানে আমি নিজস্ব জায়গার আট ফুট ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছি। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে আমার ভবন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বা ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এটা করেছেন।
সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান লাবু বলেন, এ জায়গা দিয়ে ভ্যান নিয়ে যেতে পারে না। আমাদের এমপি বলেছেন, রাস্তা করে দিলাম এত টাকা ব্যয়ে, সেই রাস্তাগুলো ক্লিয়ার হয়নি। আমরা জনগণের দাবিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই ঘর ভেঙেছি।
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, ভূমি প্রশাসনের লোকজন ছাড়াই ভেকু মেশিন দিয়ে ভবন ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সেটা বন্ধ করা হয়। এ ব্যাপারে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ ও পিবিআিই মামলার তদন্ত করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২২
এসআই