ঢাকা: আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিএনপি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
বুধবার (১ জুন) দল দুটির নেতাদের মধ্যে সংলাপের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধাণ সম্পাদক সাইফুল হক।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এখন আমরা যারা একমত হচ্ছি তারা যৌথভাবেই আন্দোলন শুরু করব এবং নিজের নিজের জায়গা থেকে আন্দোলন শুরু করবো। আন্দোলন যুগপৎ হবে এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ধারা নির্ধারিত হবে যে, শেষ পর্যন্ত সেটা কীভাবে রূপ নিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিকদলগুলো একজোট হয়ে কাজ করলে আমরা অবশ্যই এই দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, মানুষ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজপথে কার্যকর ঐক্য দেখতে চায়। আজকে আলোচনায় বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে। ভবিষ্যতে এটাকে আমরা আরও জোরদার করবো এবং আন্দোলনের কাজটাকে আমরা আরও সমন্বিত করবো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধাণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না যায়, মানুষের ভোটের অধিকার বলি, গণতান্ত্রিক অধিকার বলি অথবা একটা তদারকির সরকার— অবাধ গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অথবা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ কোনটাই বাংলাদেশে নিশ্চিত করা যাবে না। সেজন্যই আমরা আলাপ-আলোচনা করে আন্দোলনে একমত হয়েছি। দেশবাসীকে আমরা আহবান জানাতে চাই, আজকে বিরোধী দলগুলো যে উদ্যোগ নিয়েছে মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াবেন এবং তারা আন্দোলনের সাথী হবেন।
যুগপৎ আন্দোলন অর্থ বিএনপি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবে না, তবে একই লক্ষ্য অর্জনে তারা কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে, যোগ করেন তিনি।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতামত তুলে ধরে সাইফুল হক বলেন, শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তনের জন্য আমাদের এই আন্দোলন নয়। পুরো রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, পরিবর্তন, একই সাথে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কারসহ এখানে রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক যে সংস্কার এবং আমাদের এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকদের ওপরে একটা সহিংস ভূমিকায় আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে যেভাবে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়—এই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব সংস্কারের কথাগুলো সাইফুল হক সাহেব বলেছেন, আমরাও সে সমস্ত কথা বলছি। এই সব সংস্কার নিয়ে এ বিষয়ে আরও বিশদ আলোচনা করবো এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে যৌথভাবে আমাদের বক্তব্য নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হবো।
আলোচনার জন্য বেলা সোয়া ১টায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। অন্য সদস্যরা হলেন—দলটির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছান আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, মাহমুদ হোসেন ও এ্যাপেলো জামালী।
সোয়া একটা থেকে পৌনে দুই ঘণ্টা এই সংলাপ হয়। সংলাপের পর দুই দলের প্রধান সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
গত ২৪ মে বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের ঐক্য গড়ে তুলতে এই সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন তারা নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে এবং ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার করেছে সংলাপ করেছে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ