ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এবারেও বাজেট দারিদ্র্য, বৈষম্য-লুটপাট ও দুঃশাসনের দলিল: সিপিবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
এবারেও বাজেট দারিদ্র্য, বৈষম্য-লুটপাট ও দুঃশাসনের দলিল: সিপিবি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বাজেট আলোচনা

ঢাকা: এবারেও বাজেট দারিদ্র্য, বৈষম্য-লুটপাট ও দুঃশাসনের দলিল হতে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা।

শনিবার (৪ জুন ) বিকেলে রাজধানীর পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাংলাদেশের সিপিবি আয়োজিত ‘আগামী বাজেট : বৈষম্য ও দুঃশাসনের পুঁজিবাদ’ শীর্ষক বাজেট আলোচনায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

 সিপিবির নেতারা বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিবছর সরকার যে বাজেট দেয় তাতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের চলতি নীতিমালারই প্রতিফলন ঘটে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের পর প্রণীত প্রথম বাজেটে সমাজতন্ত্রের প্রভাবে সমতাধর্মী উন্নয়ন দিশা অনুসরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সেই পথ  বিচ্যুত হয়ে ক্ষমতাসীন সব রাজনৈতিক দল তথা শাসক শ্রেণি পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে দেশকে পরিচালিত করে। এর ফলে দারিদ্র্য, বৈষম্য, লুটপাট-দুর্নীতি ও সম্পদের কেন্দ্রীভবন ত্বরান্বিত হয়, যা বর্তমানে চরম রূপ নিয়েছে। তাই অতীতের মতো এবারের বাজেটও দারিদ্র্য ও দুঃশাসনের দলিল হবে।

বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ্ আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স।

আলোচনার শুরুতেই প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ। মূল আলোচক রূপে আলোচনায় অংশ নেন সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নীলোর্মি।

বাজেট আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের নীতি হলো ‘ঋণ করে ঘি খাও’ আর জনগণের ওপর এর দায় চাপাও। ফলে ঋণ পরিশোধের জন্য জনগণের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানা নিপীড়নমূলক করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৈধ করার মাধ্যমে কালো টাকার দাপট আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশে সম্পদ পাচারের ধারাও অব্যাহত থাকবে। তাই বরাবরের মতো এবারের বাজেট সাধারণ মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়নি। বরং ধনী, সম্পদশালী, ক্ষমতাবান ও লুটেরাদের প্রতি শ্রেণি-পক্ষপাত প্রদর্শন করেছে।

প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক এম এম আকাশ বাজেটে আয়ের জন্য প্রত্যক্ষ কর আদায়ের ক্ষেত্রে ধনীদের ব্যাপক ছাড় দেওয়া এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের বদলে ধনীদের জন্য সিংহভাগ বরাদ্দ রাখার বৈষম্যটি তুলে ধরেন।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার আলোচনায় বলেন, যে পুঁজিবাদী বিকাশের ধারায় জিডিপি বেড়েছে তার পরিণতিতে দেশে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশের মেগা প্রকল্পে ঋণও বেড়েছে। অন্যদিকে ঋণ-কর খেলাপি চোরাই টাকার মালিকদের সম্পদ বেড়েছে।

 শ্রমশক্তি জরিপ, খানা আয়-ব্যয় জরিপ হালনাগাদ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শারমিন্দ নীলোর্মি। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের মানুষেরা কম মজুরিতে কাজ করে শ্রম নির্ভর রপ্তানীমুখী শিল্পে ভর্তুকি দিতে থাকবে−এমনটা আশা করা ঠিক হবে না।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, বাজেটে বৈষম্য নিরসনে সরকারের ইচ্ছা এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন যা বর্তমানে অনুপস্থিত।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, প্রতিবছর সরকার একটি গতানুগতিক বাজেট উপস্থাপন করে। এই বাজেটে সাধারণ মানুষ উপেক্ষিত থেকে যায়। বরাবরের মতোই বাজেট বৈষম্যমূলক দলিল হিসেবেই সামনে আসে। রাজনৈতিক পরিবর্তন ব্যতীত এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা পরিবর্তন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময়ঃ ০০১৬ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২২

আরকেআর/ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।