ঢাকা: অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির সংবাদ সম্মেলনের কিছু বক্তব্য মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির অপর অংশের অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদদীন টিটু।
মঙ্গলবার (৭ জুন) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ওই সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ উপস্থিত না থাকলেও রাজনীতিতে অপরিচিত কয়েকজন লোক বক্তব্য রেখেছেন।
এলডিপির যে অংশের অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদদীন টিটু, এর মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। মূলত সেলিমকে নিয়ে করা মন্তব্যের জবাব দেন টিটু।
এর আগে একই দিন বেলা ১১টায় রাজধানীর এফডিসি সংলগ্ন এলডিপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট ড. আওরঙ্গজেব বেলাল বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে একটি সুযোগ সন্ধানী ও স্বার্থান্বেষী মহল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নাম ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিতে তমিজউদদীন টিটু বলেন, সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে যেভাবে শব্দচয়ন করা হয়েছে, তা একটি রাজনৈতিক দল দাবিদার কারও পক্ষে সম্ভব না বলেই আমরা মনে করি। বিশেষ করে শাহাদাত হোসেন সেলিমের মতো জাতীয়তাবাদী ঘরানার একজন সক্রিয় রাজনীতিককে নিয়ে যে শব্দসন্ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে ন্যুনতম সৌজন্য প্রদর্শন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে, বিগত ২৬ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে এলডিপি-র জাতীয় কাউন্সিলে অনুপস্থিত ছিলেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওইটা কোনো সম্মেলন ছিল না। সেটা ছিলো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভা, যেখানে কমিটি গঠন করা হয়। যদিও এর কোনো সুযোগ নাই। সেই সভার বহু আগে থেকেই অলি আহমদের রহস্যজনক রাজনৈতিক কৌশলের কারণে তার নেতৃত্ব থেকে সরে আসেন।
অলি আহমদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিরোধিতা, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, জোটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বক্তব্য এবং সর্বোপরি সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগের রাজনৈতিক সত্যতা মেলায় শাহাদাত হোসেন সেলিম অলি আহমদের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেননি। তাই অলি আহমদের নেতৃত্ব থেকে সরে আসেন এবং নেতাকর্মীদের চাপে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল করিম আব্বাসীকে নিয়ে এলডিপির পরিচ্ছন্ন রাজনীতি শুরু করেন।
অলি আহমদের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘এলডিপি-র প্রাক্তন যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ কয়েকজন নেতা/কর্মী দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ, বিশেষ করে আমেরিকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রলুদ্ধ করে, প্রতারণার আশ্রয়ে এলডিপি-র প্যাডে প্রত্যয়নপত্র প্রদানের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিলো। ’ এই বক্তব্যটি একজন সম্মানিত রাজনৈতিক বিরুদ্ধে জঘন্যতম মিথ্যাচার এবং অযাচিত কুরুচিপূর্ণ।
প্রথম কথা হচ্ছে, মতদ্বৈততার কারণে দল ছেড়ে আসার পর এমন জঘন্য মিথাচারের এলডিপি প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একইসঙ্গে সতর্ক করছে, যে অনতিবিলম্বে এরকম মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে শাহাদাত হোসেন সেলিম আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। এমনকি তিনি ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তমিজ উদ্দিন আরও বলেন, আবদুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম নেতৃত্বাধীন এলডিপির ভাষ্য হচ্ছে, ‘অলি আহমদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন অতিঅহংকারী ব্যক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচারিত। এলডিপি গঠনে শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেছেন, তা রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই দল গঠনে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সাবেক এমপি আবদুল মান্নানসহ অনেকে যুক্ত ছিলেন। ফলে, এলডিপি একমাত্র অলি আহমদের গৃহস্থালি ঐশ্বর্য- তা একমাত্র আত্মঅহমিকা আর মিথ্যাচারই বটে। ’
বিবৃতিতে তমিজ উদ্দিন উল্লেখ করেন সংবাদ সম্মেলনে ‘এলডিপির খবর প্রকাশে গণমাধ্যমকে বিরত থাকতে বলার’ বিষয়টি গণমাধ্যমের প্রতি প্রকাশ্যে হুমকি হিসেবে মনে করছে এলডিপি। আমরা মনে করি, প্রত্যক্ষ সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকার বক্তব্য নিঃসন্দেহে আইনবিরোধী ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় আঘাত। এটাকে এলডিপি গণমাধ্যমের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। ’
সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদের দলের পক্ষ থেকে এলডিপিকে কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, উপমহাদেশের রাজনীতিতে একই নামে রাজনৈতিক চর্চা করার ইতিহাস সর্বজনবিদিত। ইতিহাস বলছে, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, জাসদসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একাধিক নামে দল ও সংগঠন পরিচালনা করেছে, রাজনীতি করেছে। ফলে, রাজনৈতিক দলের নাম অলি আহমদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়; এমনকী নিজের তো নয়ই যে, তিনি তাতে বাধা দেবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে এলডিপির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এলডিপির (আব্বাসী-সেলিম) সঙ্গে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য।
‘ফলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি মনে করে, অলি আহমদের প্ররোচণায় যে কয়েকজন ব্যক্তি শাহাদাত হোসেন সেলিমকে নিয়ে কুৎসা রটনা শুরু করেছেন, অবিলম্বে তা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আইনানুগ প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে যাবো। একইসঙ্গে অলি আহমদের রাজনৈতিক রহস্যাবলিও জাতির সামনে একে-একে হাজির হবে। ’ বলেন তমিজ উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২২
এমএইচ/এসএ