ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জনগণের পকেট কেটে জনপ্রশাসনে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
জনগণের পকেট কেটে জনপ্রশাসনে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে: ফখরুল

ঢাকা: বাজেটে জনগণের পকেটের টাকা কেটে নিয়ে জনপ্রশাসনের লোকদের বেতন, সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসনে।

শুক্রবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এতটুকু বাড়েনি। এরা (সরকার) অনেক বড় বড় কথা বলে। জিডিপি বেড়েছে, পার ক্যাপিটা আয় বেড়েছে। কার আয় বেড়েছে? আজকে বাজেটে দেখবেন সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসনে। জনপ্রশাসন কী? জনপ্রশাসন হচ্ছে পুলিশ। জনপ্রশাসন হলো-ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি, ইউএনও। ওদের বেতন বাড়াচ্ছে, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাড়াচ্ছে। জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে তাদের এটা বাড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকে কিসের জন্য এই সভা। যখন মানুষ চাল-ডাল-তেল-লবন কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ওই সময় আবার মরার ওপর খড়ার ঘা হিসেবে গ্যাসের দাম ২২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। তার অর্থ এই সরকারের মানুষের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই। এরপরে কালকে আবার বাজেট দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই সরকার একটা অনির্বাচিত সরকার। জনগণের বাজেট দেওয়ার  তাদের কোনো এখতিয়ার নাই। গত ১৫বছরে যে দুঃশাসন সেই দুঃশাসনে তারা প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের মানুষের শত্রু। এরা এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। আমরা বাজেটের অনেক কিছু বুঝি না। সাধারণ মানুষ দেখে কোনটার দাম কমলো, কোনটার দাম বাড়ল। বাস ভাড়া বাড়লো কি না। বাসে উঠবেন বলবে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। চুলা প্রতি দামতো বাড়বেই। সারের দাম তিনগুন বাড়বে। শিল্প কারখানার গ্যাসের দাম বাড়বে। তাহলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম এইভাবে বাড়বে।

বাজেটে লুণ্ঠনকারীদের সাহায্য করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যারা টাকা চুরি করলো, ডাকাতি করলো, লুণ্ঠন করলো, পিকে হালদারের মতো বিদেশে পাচার করলো। তারা ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে টাকা ফেরত আনতে পারবে এবং কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। হাইকোর্ট থেকেও প্রশ্ন করা যাবে না। আমি এখন কি বলবো? যারা বাজেট দিলো তারা কি সাধারণ মানুষের সরকার নাকি লুটেরা চোর ডাকাতদের সরকার?

এদিকে বলে উন্নয়ন, এত উন্নয়ন যে সোনা দিয়ে মুড়ে দিচ্ছে। আমাদের রুমিন ফারহানা বৃহস্পতিবার ভালো বলেছেন, পদ্মা ব্রিজ হলো গোল্ডেন ব্রিজ। সোনা দিয়ে মোড়ানো ব্রিজ। আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করতাম তখন বিভিন্ন রকম স্লোগান দিতাম। তখন তেলের দাম দশ টাকা বাড়লে বড় ব্যাপার ছিল। তখন আমরা বলতাম দশ টাকার তেল খেয়ে স্বর্গে যাবো। এখন বলতে চাই টোল দিয়ে পদ্মা ব্রিজ দিয়ে আমরা স্বর্গে যাবো।

জনগণের জন্য এই সরকারের ভালোবাসা নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের উন্নয়নে কি হয়েছে? শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ৪২ জন হলেন দরিদ্র। ক্রয় ক্ষমতা নাই। সেই মানুষগুলোর জন্য এই বাজেটে বা আগের বাজেটে কিছুই করেনি।

পুলিশের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আশা করবো পুলিশ ভাইদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আপনারা আওয়ামী লীগকে মিটিং মিছিল করতে দেন, আমাদেরকেও মিটিং মিছিল করতে দিতে হবে। আর যদি বাধার সৃষ্টি করেন তাহলে জনগণ আর সেই বাধা মানবে না। আপনারা মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার করবেন না। বিনা কারণে মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করবেন না। তাহলে একদিন না একদিন আপনাদের জবাবদিহী করতেই হবে।

সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় এই দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনারা পালাবারও পথ পাবেন না।   

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।

প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য  নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর দক্ষিণের সদস্য ইশরাক হোসেন, যুগ্ম-আহবায়ক ইউনূস মৃধা, তহিরুল ইসলাম তুহিন, রবিউল ইসলাম রবি, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, ওলামা দলের আহবায়ক মাওলানা নেছারুল হক, মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।  

এর আগে দলীয় নেতাকর্মীরা সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে নানা স্লোগান দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এমএইচ/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।