ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা!

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা!

ঢাকা: দীর্ঘদিন পর বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে সরব হয়ে ওঠায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে পরিস্থিতি। এ অবস্থা বজায় থাকলে দিন যত গড়াবে পরিস্থিতি ততোই অবনতির দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

অতি সম্প্রতি ১৫টির মতো স্থানে বিএনপির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। এসব সংঘর্ষ আর উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য বিএনপিকে দায়ী করছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।

সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করতে আন্দোলনের নামে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করছে। এর আগেও তারা এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং আবারও তা করতে চাচ্ছে।  

তবে সবকিছু মাথায় রেখেই সরকার অগ্রসর হবে এবং পদক্ষেপ নেবে বলে তারা জানান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১ সেপ্টেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বিএনপি আন্দোলন ও নির্বাচনে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর এখন প্রতিপক্ষ হিসেবে পুলিশকে দাঁড় করিয়েছে। বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি মানেই পুলিশের ওপর হামলা। বিএনপির আন্দোলন, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন মানেই তো সহিংসতা আর সন্ত্রাস এবং জনগণের সম্পদ নষ্ট ও নিজেদের মধ্যে মারামারি করা।  

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেন, আন্দোলন করেন ভালো কথা, কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করলে জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে।
 
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এর আগে ২০১৩ সালের শেষের দিকে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে সহিংসতার অভিযোগ আছে। নির্বাচন প্রতিহত করতে ওই সময় রাজপথে একের পর এক হরতাল, অবরোধের কর্মসূচি দিতে থাকে বিএনপি-জামায়াত জোট। ওই সব কর্মসূচিকে কেন্দ্র বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনাসহ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান, অনেকে আহত হন। সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূতিতে ২০১৫ সালে লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। তখনও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগ, যানবাহনে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময়ও প্রায় এক শ’ মানুষ প্রাণ হারান এবং অনেকে গুরুতর আহত হন। ওই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সরকার মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়।

এর পর গত কয়েক বছর বিএনপি বিভিন্ন সময় আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও তেমন কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে।  

দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপি আন্দোলনের কথা বলে এলেও তাদের আন্দোলন দৃশ্যমান হয়নি। জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি, দেবে না বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায়ই মন্তব্য করে থাকেন।  

গত কয়েক বছরে বিএনপি কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। এটা হতে পারে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কিংবা রাজনৈতিক কৌশল।  

আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রের মত, দীর্ঘ দিনের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে নিজেদের শক্তির প্রামাণ দেওয়ার চেষ্টা করবে। সহিংস পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে তারা বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও এ ধরনের তথ্য আছে।  

আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং দীর্ঘ দিনের ব্যর্থতা ঘোচাতে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বিএনপি। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে তারা সহিংসতা ও সংঘাতের পথেই হাঁটছে। কর্মসূচি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের নাশকতা, সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে- সরকারের কাছে এমন তথ্য আছে।  

এ বিষয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাচ্ছে। তারা রাজনীতি করছে না, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অতীতেও তারা এসব করেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি যতে ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের মতো না হয় সেটা প্রশাসন দেখবে। আমরাও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো। আমরা জনগণের সমর্থন পাচ্ছি। আগের মতো পরিস্থিতি বিএনপি করতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
এসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।