ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যানের মারধরে আহত ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যানের মারধরে আহত ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার সহযোগীদের মারধরে আহত ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবন মারা গেছেন।  

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।

 

দুপুর সোয়া ২টার সময় রামেক কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জামিউল আলীম জীবনের বড় চাচা অধ্যাপক এমএম ফিরোজ।  

তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন ও রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে তারা রওনা দেবেন। পাশাপাশি দাফনের সময় নির্ধারণ করেন।

গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার লোকজনের মারধরে গুরুতর আহত হন জামিউল আলীম জীবন ও তার বাবা ফরহাদ হোসেন শাহ। এ অবস্থায় তাদের প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে বাবা ফরহাদ হোসেন শাহকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা গেলেও জীবনকে আইসিইউতে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়।

সেখানে গত ৫ দিন ধরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে ছিলেন জীবন। এ অবস্থায় তার মৃত্যু নিয়ে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল তার মৃত্যু হয়েছে আগেই কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর বিষয়টি তখন নিশ্চিত করেননি। বরং আরও ৭২ ঘণ্টা আইসিইউতে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়।  

এর আগে দুই দফা মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মিছিল-সমাবেশ করে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান হয়। এমনকি তাকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণাও করা হয়।

এদিকে জীবনের পরিবারের অভিযোগ, জীবন অনেক আগেই মারা গেছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য ঘটনায় জামিউল আলীম জীবনকে আইসিইউতে লাইফ সার্পোটে রাখেন। শেষ পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার নীবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার কথা বলে আবারও আইসিইউতে রাখা হয়। আজ দুপুর ১টার সময় জীবনের মৃত্যু নিশ্চিত করে তাদের কাছে সোয়া দুইটার সময় মরদেহ হস্তান্তর করেন। পরে তার ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ফের মর্গে নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জামিউল আলীম জীবনের বড় চাচা অধ্যাপক এমএম ফিরোজসহ তার পরিবারের লোকজন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারের জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভেতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েক জনকে চুরির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করেন।

এ নিয়ে চেয়ারম্যান সালিশ বৈঠক বসিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে জোড়পূর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেন। এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জামিউল আলিম জীবন আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন তাকে ডেকে পাঠান। একপর্যায়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং চেয়ারম্যান আসাদ, তার বড় ভাই ফয়সাল ও ছোট ভাই আলিম আল রাজি এবং তার লোকজন জীবনকে কিল ঘুষিসহ মারতে থাকেন।

খবর পেয়ে তার বাবা ফরহাদ হোসেন ছেলেকে ছাড়াতে এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করতে থাকে চেয়ারম্যান। হামলাকারীরা রড, বাঁশের লাঠি ও ধারালো হাসুয়া দিয়ে তাদের আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। পরে স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং আহত জামিউল আলীম জীবনকে আইসিইউতে রাখা হয়।

পরে এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আহত ফরহাদ হোসেন শাহ এর স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুইভাই ও অজ্ঞাত আরও চার/পাঁচজনের নামে নলডাঙ্গা থানায় স্বামী-সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দায়েরের পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার অপর ভাই ফয়সাল হোসেন শাহ (ফটিক) পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আহত ফরহাদ হোসেন শাহ ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে এবং নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ফিরোজের আপন ভাই। নিহত জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন। দেড় বছর আগে বিয়ে করা জামিউল আলীম জীবনের তিন মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। জামিউল আলীম জীবন আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও বিয়ে ও বাচ্চা হওয়ার কারণে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড থেকে তিনি অব্যাহতি নিয়েছিলেন।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, ফরহাদ হোসেন শাহ এর স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ফয়সাল ও আলিম আল রাজিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মারধরের মামলা দায়ের করেছিলেন। এখন এই মামলাই হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে।

এদিকে জীবনের মত্যুর সংবাদ পেয়ে নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা রামশার কাজীপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের লোকজনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। জীবনের বাড়িতে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও এলাকার শতশত মানুষ ভিড় জমিয়েছে। অপরদিকে জীবনের বাড়িতে চলছে আহাজারি। স্বজনদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।