ঢাকা: বিএনপি হাঁটুভাঙা নয়, আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগেরই কোমর ভেঙে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘বিএনপি হাঁটুভাঙা বলে লাঠির ওপর ভর করেছে’, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ মন্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে এ পাল্টা মন্তব্য করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এ সমাবেশটি আয়োজিত হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন বিএনপির নাকি হাঁটুভাঙা। আমাদের যে হাঁটু ভাঙেনি এটা তো টের পাচ্ছেন? লাঠিও আমরা নিইনি। আপনাদের তো ইতিমধ্যে কোমর ভেঙে গেছে। আপনারা শুধু লাঠি নয়, আপনারা রাম দা, তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপরে হাঁটছেন। আপনারা জনগণের সঙ্গে নেই, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সেজন্য আজকে আপনাদেরকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকতে হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই একটা সন্ত্রাসী দল। তাদের জন্ম হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। সেজন্য একদিকে তারা বলে, আমার সোনার ছেলেদের হাতে আমি কলম তুলে দিয়েছি। আর অন্যদিকে তারা সোনার ছেলেদের হাতে বন্দুক-পিস্তল-লাঠি-সোটা দিয়েছে।
গত ২২ আগস্ট থেকে জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছি। সেই আন্দোলনে যখন জেগে উঠছে, তখন তারা একে দমন করার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। তারা ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে, তারা খুন করে, তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৫ হাজারের ওপর নেতা-কর্মীদের আসামি বানিয়েছে। ৩ হাজারের মতো ছেলেদের আহত করেছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কেন? তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, মিছিলে; ছাত্রদলের একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি, বন্দুক ও টিয়ার গ্যাস নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে।
ক্ষমতাসীন দলটির উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, এই ১৫ বছর ধরে তোমরা অত্যাচার চালাচ্ছো, গুম করছো, মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছো। কিন্তু আজকে জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে- আমি ছাত্র সমাজকে বলবো, এদেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এবারও যে পরিবর্তন হবে তা আমার ছাত্রদলের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হবে দূর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের দায়িত্ব একটাই- দেশের সকল ছাত্র সমাজকে, তরুণ-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করে একটা দূর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগের বাধ্য করতে হবে। এ সময় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে-ওই সমস্ত উল্টো-পাল্টা কথা না বলে আপনারা পদত্যাগ করুন শান্তিতে। সেফ এক্সিট নেন এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন।
ছাত্রদলের এ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তাদের অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা দেখা গেলেও কোনো লাঠি ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহত নেতারাও মঞ্চে এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সালাম-সৌহার্দ্য করেন।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় প্রতিবাদী ছাত্র সমাবেশে সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শাম্মী আকতার, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, এসএম জিলানী, মোনায়েম মুন্না, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, ইশরাক হোসেন, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান, রাকিবুল ইসলাম ও আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এমএইচ/এমজে