বরিশাল: বরিশাল নগর থেকে ফোরকান হোসেন ইরান নামে এক ছাত্রদল নেতার কথিত নিঁখোজ থাকার অভিযোগ ওঠার পর তাকে শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার রাতে তাকে বরিশালের উজিরপুর থানার গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়নপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় থেকে উদ্ধার করা হয়।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান জানান, ট্রিপল ৯৯৯ এর মাধ্যমে তারা জানতে পারেন উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়নপুর এলাকার একটি মসজিদ সংলগ্ন জঙ্গল থেকে স্থানীয়রা ইরানকে উদ্ধার করেছেন। খবর পেয়ে তাদের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ইরানের পরিবারকে খবর দেন। রাত ১২টার দিকে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দিতে চাইলে মডেল থানায় দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বজনদের।
কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগির হোসেন বলেন, ছাত্রদল নেতা ইরানকে গত শনিবার রাত ১০টায় একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার অভিযোগ দেন। ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা চাচাতো ভাই রাব্বিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সাজানো ঘটনার রহস্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে উদ্ধারের নাটক করেছেন।
অপরদিকে অভিযোগের তদন্তে থাকা কোতয়ালি মডেল থানার এসআই আরাফাত হাসান বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শনিবার রাত ১০টায় তাকে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাদের কাছে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। তবে বিকেল সাড়ে চারটার দিকের ফুটেজে দেখা গেছে একটি অটো থেকে নেমে রাব্বি একদিকে ও ইরান আর দিকে চলে গেছেন। এছাড়া ঘটনার পর রাব্বি তার পরিবারকে না জানিয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুলকে জানিয়েছেন। তার পরামর্শে রাব্বি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
আর এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান জানান,ঘটনার পর ইরানের নম্বর থেকে তাকে ফোন করে জানানো হয়, ইরানকে সাদা মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইরানের চাচাতো ভাই রাব্বি পরিচয় দেওয়া ফোনকারীকে বিষয়টি তার পরিবারকে অবহিত করতে বলেছি। কিন্তু তিনি জানান, ইরানের বাবা ও মা অসুস্থ। তাদের জানানো যাবে না। তখন তাকে অন্য কোনো আত্মীয় স্বজন নিয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সকালে থানায় গিয়ে তারা অভিযোগ দিয়েছেন। আর এতটুকুই জানেন বলে দাবি করেন জেলা ছাত্রদলের এই নেতা।
এদিকে ইরান উদ্ধারস্থল নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মন্টু জানান, রাত আটটার দিকে পথচারীরা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে টর্চের আলো ফেলে শিকল দিয়ে হাত পা অবস্থায় দেখতে পেয়ে ইরানকে উদ্ধার করেছেন। উদ্ধারের পর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে তার আত্মীয় স্বজনকে খবর দিলে ইরানের মা এসে ছেলেকে নিয়ে যান।
ইরানের বরাতে মন্টু বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়েছে। গেঞ্জি দিয়ে তার মুখ বাঁধা ছিল। জ্ঞান ফিরলে নড়াচড়া করে গেঞ্জি মুখ থেকে সরে গেলে বাঁচাও বাচাও চিৎকার করেছেন ইরান। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়নি।
তবে এলাকাবাসী সন্ধ্যার পর দুটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস প্রবেশ করতে দেখেছেন। তাদের ধারণা মাইক্রোবাসে করে তাকে এনে ফেলে রাখা হয়েছে।
ইরানের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আগে সাংবাদিকের কাছে রাব্বি জানিয়েছিলেন, তার মোবাইল ফোন অচল হওয়ায় শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরে আসেন তিনি। ছাত্রদল নেতা ইরানকে নিয়ে মোবাইল ফোন সার্ভিসিং করে রাত ১০ টার দিকে গোড়াচাঁদ দাস রোডের ভাড়া বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ঈশ্বর বসু রোডের প্রবেশমুখে এলে একটি সাদা মাইক্রোবাস এসে তাদের গতিরোধ করে। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ইরানকে জিজ্ঞাসা করেন আপনার নাম কি ইরান? ইরান উত্তর দেন হ্যাঁ। এরপর তাদের সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে উঠতে বলেন। এ সময় ইরান তার ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি রাব্বির হাতে দিয়ে মাইক্রোবাসে ওঠেন।
রাব্বি আরো জানান, ইরানকে নেওয়ার পর খবর দিয়ে স্বজনদের নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় গিয়ে কোনো সন্ধান পাননি। জেলা ও মেট্রোপলিটন ডিবি অফিসে গিয়েও ইরানের সন্ধান মেলেনি। সেখানকার কর্মরতরা জানিয়েছেন তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ ঘটনায় পরের দিন সকাল কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগ আকারে তা রেখে দেন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম মিঠু জানান,বিষয়টি রহস্যজনক। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরান হেঁটে বের হয়ে মোবাইল ফোন দিয়ে চলে গেছেন। ইরানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। প্রশাসনের নজরে থাকার মতো কোনো কর্মকাণ্ডও করেনি।
ছাত্রদল নেতা ফোরকান হোসেন ইরান বরিশাল নগরের বেসরকারি একটি ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র ছাত্র। তিনি বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ১নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক।
ইরান উজিরপুর উপজেলার ধামুরা এলাকার বাসিন্দা আলম চাঁন সরদারের ছেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
এমএস/এসআইএস