ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে শহীদ জেহাদ দিবস উপলক্ষে জেহাদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ১৯০টা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমেরিকার মানবাধিকার ডিপার্টমেন্ট এই প্রতিবেদন লিখেছে। সেখানে বাংলাদেশের ওপরে ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আছে। সেই ৭৪ পৃষ্ঠার প্রত্যেকটা জায়গায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে এখানে জোর করে নির্বাচন করা হয়, এখানে আগের রাতেও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখানে এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স হয় অর্থাৎ জোর করে মানুষকে তুলে নিয়ে যায়। এখানে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। এখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। ধরে নিয়ে কাস্টডিতে নির্যাতন করা হয়, সেটাও তারা পরিষ্কার বলে দিয়েছে। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীরা ছাড়া অর্থনীতিতে আর কেউ লাভবান হতে পারছে না। সেখানে এটাও বলা হয়েছে, যারা ইসলাম ধর্ম প্রচার করে, অন্য ধর্ম প্রচার করে তাদেরও রেহাই দেওয়া হয় না। এটা আমি খুব সংক্ষেপে বললাম।
বিএনপির সমহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রধান কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যাওয়ার আগের দিন তারা সংবাদ সম্মেলন করে একটা প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে তারাও একইভাবে বলেছেন যে, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এখানে গুম করা হচ্ছে। মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সেজন্য তারা বলেছেন, গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করার জন্য স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গঠন করা হোক।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে কী রকম অবস্থা দাঁড়িয়েছে, এই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না। কথা বললে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় যেকোনো মানুষকে যেকোনো সময় তুলে নিয়ে যাবে, এতে কোনো জামিন নাই। এরকম অসংখ্য ঘটনার মধ্যে কয়েকদিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে, হৃদয় বিদারক ঘটনা। একজন মহিলা রাজবাড়ীতে তিনি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত, ছোট ছোট দুটা বাচ্চা আছে, রাত দুটোর সময় পুলিশ তার বাসা রেইড করে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। বার বার বলেছে আমাকে দিনে নেন, রাতে কেন নিচ্ছেন। সে কথা শোনেনি। কী অপরাধ তার? প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে সামান্য কী লিখেছে। আমি সেদিন বলেছি, ওনারা কি ইশ্বর হয়ে গেছেন? ওনারা কি বিধাতা যে, ওনাদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলা যাবে না? এই একটা অবস্থা তারা করেছে, কিছুই বলা যাবে না। কিছুদিন আগে সাংবাদিক কনক সারোয়ারের বোনকে ধরে ৬/৭ মাস পরে জামিন দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ কনক সারোয়ার সত্য কথাগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের সবার নামে অসংখ্য মামলা। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তিন/চার বছর যাবত আটক করে রেখেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে একইভাবে একটা পুরোনো সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা। চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল। এখন ৭০টা কেজি। বিনা পয়সায় সার দেবে বলেছিল। এখন সারের দাবিতে কৃষকদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সার পাচ্ছে না। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল। সেই চাকরি এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। আপনাকে চাকরি পেতে হলে আওয়ামী লীগ হতে হবে, দ্বিতীয়ত ২০/৩০ লাখ টাকা দিতে হবে। যারা চাকরিতে আছে তাদের কোনো প্রোমোশন হবে না যদি আওয়ামী লীগের টিক চিহ্ন না থাকে। এই একটা রাষ্ট্র তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। যেটা দিয়ে দেশকে পুরোপুরিভাবে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চলে যায়। অথচ কত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চারদিকে আতশবাজি ফুটিয়ে বলেছিল বাংলাদেশ বিদ্যুতে একেবারে সয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আর কোনো অসুবিধা নাই। অথচ এখন লোডশেডিং। কারণ চুরি-দুর্নীতি। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করে সমানে চুরি করে নিয়ে গেছে।
গার্মেন্টের অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কারণ পৃথিবীতে চাহিদা কমে আসছে। একদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে, ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে যারা গার্মেন্ট ব্যবসা করেন তাদের টিকে থাকাই মুসকিল হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে শ্রমিকদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। আমি তো বাজারে খুব কম যাই। আমার স্ত্রী বাজার করে। প্রতিদিন বলে আর বাজারে যাওয়া যাবে না, জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে আর ধৈর্য ধরা যাচ্ছে না।
শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ও সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার, জাগপা নেতা খুন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ