ঢাকা: অর্থনীতি চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন দেশ খেয়ে ফেলছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এমন দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না তাহলে দুইদিন আগে গাড়ি বন্ধ করল কেন? বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই জেগে উঠবে এবং এই ভয়াবহ একনায়ক হাসিনা সরকারের পতন ঘটাবে। এই সমাবেশের একটাই কারণ। একজন মাত্র ব্যক্তি, একটামাত্র দল গত ১৫ বছর ধরে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্যাতন করছে। বিএনপির উপর নির্যাতন করছে। আমাদের সমস্ত দেশটাকে তারা কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলছে।
ফখরুল বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কেন? হাসিনার এই বাংলাদেশ দেখার জন্য? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবো সেজন্য। এখন কি আমরা ভোট দিতে পারি? আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। এর আগে ১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। আমরা সেই নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেব না।
নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন বলেন, সোজা কথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনার অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না; সাফ কথা। আমাদের একটাই দাবি হাসিনার পদত্যাগ। আমাদের দাবি সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তাদের মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট হবে এবং জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে।
আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন কি ঘরে ঘরে চাকরি আছে? চাকরি দিয়েছে? আওয়ামী লীগের লোক হলে চাকরি দেয়। ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তাই এই ঘুষখোর, এই ভোট চোরদের আর মানুষ দেখতে চায় না।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখন আবার নতুন একটি ধুয়া তুলছে। জঙ্গিবাদ আবার বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটা হচ্ছে আরেকটি চক্রান্ত। বলেছে যারা অগ্নিসংযোগ করেছে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত তাদের রেহাই দেওয়া হবে না। ওই অস্ত্র আপনাদের ভোঁতা হয়ে গেছে। ওই অস্ত্র আর চলবে না। আপনাদের আসল চেহারা সবাই জেনে গেছে। পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা তাদের রিপোর্টে লিখেছে এই সরকার যা বলে মিথ্যে বলে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার মানবাধিকার সম্পর্কে যে সব রিপোর্ট দেয় তা মিথ্যে। এখানে মানবাধিকার নেই। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে, কথা বলতে দেয় না। নির্বাচনের পূর্বে সভা করতে দেয় না, নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয় না। কথায় কথায় হকিস্টিক, রামদা, আর বন্দুক নিয়ে আসে।
ফখরুল বলেন, আর এভাবে চলতে দেবে না এদেশের মানুষ। দেশের মানুষ এখন রুখে দেবে। ওই বন্দুক, ওই পিস্তল, ওই লাঠি, ওই হকিস্টিক সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনার পরে আজ রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছে দলটি।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশিদ এমপি, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, জাহিদুর রহমান জাহিদ এমপি, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
এমএইচ/এসএ