ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সিলেটে ডিজেল সংকট চরমে, মিলছে চাহিদার অর্ধেক

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
সিলেটে ডিজেল সংকট চরমে, মিলছে চাহিদার   অর্ধেক

সিলেট: জ্বালানি তেল ডিজেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সিলেটে। চাহিদার বিপরীতে মিলছে অর্ধেক ডিজেল।

রেলওয়ের ইঞ্জিন ও জ্বালানিবাহী ওয়াগন সংকটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আবার সেচ মৌসুমের কারণেও এই জ্বালানি তেলের চাহিদাও বেড়েছে। বাড়তি চাহিদা ও ওয়াগন না আসার কারণে সঙ্কট তীব্র হয়েছে- এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সঙ্কট অব্যাহত থাকলে অনেক পেট্রল পাম্প বন্ধ হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। গত মাস (ডিসেম্বর) থেকে এই সংকট শুরু হলেও এই সপ্তাহে এসে তা চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ অবস্থায় ডিপোগুলোতেও ডিজেলের মজুদ ফুরিয়ে গেছে। পেট্রল পাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত ডিজেল না থাকার কারণে প্রায় প্রতিদিনই ভারী যানবাহন চালকদের সঙ্গে পাম্প কর্মচারীদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী ওয়াগন সিলেটে আসতে পারছে না। প্রতি সপ্তাহে যেখানে ৫টি ডিজেলবাহী ওয়াগন (রেক) আসার কথা, সেখানে আসছে দুটি করে। গত শুক্রবার একটি তেলবাহি ওয়াগন (রেক) আসার কথা থাকলেও আসেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরো মৌসুমে সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রতি সপ্তাহে ডিজেলের চাহিদা রয়েছে ২৭ লাখ লিটার। অথচ এর বিপরীতে বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১২ লাখ লিটার।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সিলেটের সমন্বয়ক ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জেলা মার্কেটিং অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে সপ্তাহে ৩ দিন (মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার) ডিজেলবাহী ওয়াগন (রেক) আসে। এর মধ্যে মেঘনা পেট্রোলিয়ামে ১ লাখ ৫৫ হাজার লিটার, যমুনায় ১ লাখ ৩১ হাজার লিটার এবং পদ্মায় ১ লাখ ৫৪ হাজার লিটার। আর পেট্রল আসে ৩৯ হাজার লিটার। পদ্মা ও যমুনা পেট্রোলিয়ামে ১০ লাখ লিটার করে এবং মেঘনায় ৮ লাখ লিটার  ডিজেলের চাহিদা রয়েছে। সপ্তাহে ৩দিন আসার পর শুক্র, শনি বন্ধ থাকায় রোববারে চাপ পড়ে বেশি। আর সেচ মৌসুম হওয়ায় বিশেষ করে ডিজেলের চাহিদাও বেশি রয়েছে।

তিনি বলেন, সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট নতুন নয়, এটি দীর্ঘদিনের। এ অবস্থায় গত চারদিন ধরে রেলওয়ের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন বিশ্ব ইজতেমার সার্ভিসে ব্যবহার হওয়ায় এই সংকট আরও তীব্রতর হয়েছে। কেননা, সড়ক পথে ভৈরবের আশুগঞ্জ থেকে সিলেটের দূরত্ব প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার। যে কারণে সড়ক পথে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। তাই রেলপথই এ অঞ্চলে জ্বালানি আমদানির একমাত্র ভরসা। ফলে সংকট উত্তরণে বিকল্প হিসেবে ‘রিভার ডিপো’ করে নৌ পথে তেল আসার ব্যবস্থা করতে হবে।          

এদিকে ডিজেল সংকটের কারণে জ্বারানি তেল পাম্প মালিকদের পাশাপাশি চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। বোরো চাষের মৌসুমে সেচের জন্য ডিজেল না পেয়ে ফসল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। ডিজেল সংকট দেখা দেওয়ায় যানবাহন চলাচল, সেচ পাম্প ও জেনারেটর চালানোর ক্ষেত্রে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।

এমন পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনে বৈঠকে বসেন পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতারা। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরীর দক্ষিণ সুরমার কুশিয়ারা কনভেনশন হলে এ বৈঠক হয়। এদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা বৈঠকে আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে সিলেট বিভাগের ১১৪টি পেট্রল পাম্প মালিকরা জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রেখে ধর্মঘট আহ্বান করেছেন।

এ বিষয়ে পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে ৩ বছর ধরে জ্বালানি তেলের তীব্র সঙ্কট চলছে। চাহিদার অর্ধেক ডিজেলও এখন পাওয়া যায় না। ফলে ব্যবসা পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দিনদিন এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে বোরো চাষ ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, সপ্তাহে যেখানে প্রতিদিন একটি করে তেলবাহী লরি চট্টগ্রাম থেকে আসার কথা, সেখানে সপ্তাহে আসছে মাত্র একটি। তাই জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা উপায়ন্ত না পেয়ে ভৈরবের আশুগঞ্জ থেকে নিজ খরচে জ্বালানি তেল আনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে শনিবার জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়াতে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এনইউ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।