ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ঘূর্ণিঝড় মোখা: এলএনজি টার্মিনাল বন্ধে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
ঘূর্ণিঝড় মোখা: এলএনজি টার্মিনাল বন্ধে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ধেয়ে আসার খবরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হওয়ায় পর ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রান্নার গ্যাস কম থাকা, ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।

 

এদিন দুপুর থেকেই ঢাকার মিরপুর, ধনিয়া, যাত্রাবাড়ী, কাজলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংকটের কথা জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।

বিদ্যুতের পাশাপাশি সকাল থেকে ঢাকার বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাস চলে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে অনেক বাসায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও জানা যায়।

গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট প্রসঙ্গে শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা শিরিন আক্তার বলেন, সকাল থেকেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করছে। দুপুর থেকেই গ্যাসও নাই, রান্না বান্নার সমস্যা হচ্ছে।  

মিরপুর ১২ নম্বরের ‘সি’ ব্লকের বাসিন্দা শিবি বলেন, আমাদের সকাল থেকেই বার বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে, চুলায় গ্যাসও কম আসছে। কখনো আবার গ্যাস থাকছেই না।  

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এক বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে মহেশখালির দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে শুক্রবার (১২ মে) রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র যেমন চট্টগ্রাম, মেগনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, আংশিক চালু থাকছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি থাকার কারণে এ সময় ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গাতেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বার্তায় আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বর্তমান পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়া মাত্রই মহেশখালির দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করবে। সম্মানিত গ্রাহক আপনাদের সাময়িক অসুবিধার কারণে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।  

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ৩০ শতাংশেরও বেশি চাহিদা পূরণ করা হয়। আমদানি করা এসব এলএনজি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার জন্য মহেশখালীর অদূরে দুটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করা আছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ধেয়ে আসতে থাকায় ভাসমান টার্মিনাল দুটি শুক্রবার (১২ মে) রাত ১১টার দিকে নির্ধারিত স্থান থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ওই দুটি টার্মিনাল থেকে এতোদিন দৈনিক গড়ে যে ৭০০ এমএমসিএফ গ্যাস আসতো তা বন্ধ হয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালায়ের তরফে দুঃখ প্রকাশ করে এক বার্তায় বলা হয়, ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া টার্মিনাল দুটি দ্রুত পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। তবে মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মে মাসের হিসাব মতে, এখন দেশে দৈনিক ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট থেকে ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এসব বিদ্যুতের প্রায় ৪৯ শতাংশই আসে বিভিন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উৎপাদন বিভাগের সদস্য এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, মোখার প্রভাবে কয়েকদিন সমস্যা থাকবে। কেবল এলএনজি বন্ধ থাকার কারণে দুই হাজার মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি উৎপাদন কমে যেতে পারে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ জানান, এলএনজির সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে গেছে। এলএনজি থেকে তিতাস ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত, যা এখন কমে গেছে। এটাই বর্তমান গ্যাস সংকটের কারণ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।