ঢাকা: আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রোববার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ আশার কথা জানান।
তিনি বলেন, গ্যাস, কয়লা এবং তেলের যোগান দিতে আমাদের সময় লাগছে। সেজন্য সময় লাগছে। লোডশেডিংয়ের আকার খানিকটা বড় হয়েছে, পরিস্থিতি অনেকটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
গরমের মধ্যে লোডশেডিং হওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করছি, এটা কত দ্রুত সমাধান করা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, কত দ্রুত পায়রায় কয়লা আনা যায়। ওখানে আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। বড়পুকুরিয়াতেও আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে।
নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের লিকুইড ফুয়েল নির্ভর যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ছিল, সেগুলো প্রায় অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। সেজন্য আমাদের লোডশেডিংয়ের মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের আশেপাশেসহ গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায়। আমরা সকাল থেকে তা মনিটর করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, অচিরেই যেন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমরা আশা করব আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ আমাদের কয়লার যোগান দিতে হচ্ছে, তেলের যোগান দিতে হচ্ছে, গ্যাসের যোগান দিতে হচ্ছে। আবার শিল্পে গ্যাস দিতে হচ্ছে। সমস্ত পরিস্থিতি একসাথে এসেছে। তাপ প্রবাহও বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা কোথাও ৪১ ডিগ্রি হয়ে গেছে। এজন্য আমাদের পিক আওয়ারে চাহিদা বেড়ে গেছে। আমাদের হাতে যে পাওয়ার প্ল্যান্ট মজুত ছিল, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য প্রস্তুত রাখছিলাম, সেটিও আমরা জ্বালানির কারণে চালু রাখতে পারছি না।
আগের মত শিডিউল লোডশেডিংয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে কি না- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এই মুহূর্তে সেভাবে যাচ্ছি না। কিছু জায়গায় আমরা কিছুটা লোডশেডিং করছি। আবার সেগুলো থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমাদের ফুয়েল অর্থাৎ কয়লা, গ্যাস ও তেলের সংকট। আমরা ঠিকমতো যোগান দিতে পারছি না। সেই কারণেই ঝামেলাটা হচ্ছে। তবে আমি মনে করি এটা খুব সাময়িক, এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে যোগানের চেষ্টা হয়ে গেছে, আমরা চেষ্টা করছি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটা ভালো জায়গায় যেতে পারব।
নসরুল হামিদ বলেন, আমরা দুই মাস আগে থেকে চেষ্টা করছিলাম। আমরা জানতাম যে এ রকম একটা পরিস্থিতি হতে পারে। সেটার সমাধান নিয়ে আমরা চেষ্টা করছিলাম। তবে আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। আমাদের অর্থনৈতিক বিষয় আছে। সময়মতো এলসি খোলার বিষয়ে আছে। সময়মতো জ্বালানি পাওয়ার বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলোকে আমাদের একসঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হয়। তবে আশার বাণী হলো, সামাল দেওয়ার একটা ব্যবস্থা অন্তত হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় দিতে হবে। সে সময় পর্যন্ত সবাইকে কিছুটা কষ্ট ভোগ করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আমরা দেখছি আমাদের আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনব। মনে হচ্ছে তা আমরা করতে পারব।
পেট্রোল পাম্প অকটেন দিতে পারছে না- এমন গুজব নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পেট্রোলের তো অভাব নেই। আমরা যেটা আনার চেষ্টা করছি, সেটা হেভি ফুয়েল, সেটা দিয়ে তো গাড়ি চলে না। আমরা প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন করতে যাচ্ছি। এর অধিকাংশই আমরা বিদ্যুৎ ইন্ডাস্ট্রিতে দিচ্ছি। গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে, বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আসবে। আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আমরা একটা ভালো পরিস্থিতিতে যাব। কারো আশঙ্কা করার কিছু নেই। আমরা আশাবাদী আমরা মোটামুটি গুছিয়ে ফেলেছি।
সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এক্ষেত্রে সেটি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানির যোগান দেওয়ার বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমরা বহু আগে থেকে বলে আসছিলাম, আল্টিমেটলি আমাদের এই যোগানটা দিতে হবে। দেরি হয়ে গেছে, সেজন্য আমাদের মাথা পেতে নিতে হবে। আমরা সবাই এর ভুক্তভোগী। তবে শঙ্কিত হবেন না, এখনও এটি আমাদের কন্ট্রোলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৩
এমআইএইচ/এমএইচএস