ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম

সিলেটজুড়ে অসহনীয় লোডশেডিং, চরম জনভোগান্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
সিলেটজুড়ে অসহনীয় লোডশেডিং, চরম জনভোগান্তি

সিলেট: সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সিলেট ছিল এক টুকরো শান্তির নগরী। বড় ধরনের কোনো কারণ ছাড়া ছিল না লোডশেডিং।

কিন্ত নির্বাচন শেষ হতেই সেই লোডশেডিংয়ের সেই পুরোনো রূপ, যদিও তা ছিল সহনীয় মাত্রায়। কিন্তু এ দুই দিন ধরে তাপমাত্রার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটজুড়ে লোডশেডিং অসহনীয় মাত্রায় বেড়েছে।  

বুধবার (১৯ জুলাই) সিলেটে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৮ সেলসিয়াস। দিনভর ছিল গরমের তীব্রতা। এরমধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে জনজীবন। সিলেট নগরী নয়, গ্রামাঞ্চলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছিল লোডশেডিংয়ের তীব্রতা। ফলে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।   

দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট বিভাগের প্রায় ২২ লাখ গ্রাহক। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলায় পানি সংকটেও পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অনেকের বাসা-বাড়ি, হোটেল-মোটেলে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেসঙ্গে প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও।

বিশেষ করে তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিদ্যুৎহীন শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের গরমে হাঁসফাঁস হতে দেখা গেছে।   

সিলেট নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একেতো গরমে চরম ভোগান্তি, তার ওপর নেই বিদ্যুৎ। এ কয় দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সংকটে পড়েছেন তারা। কেননা, সিসিকের পানি শাখা থেকে যখন পানি সরবরাহ করা হয়, তখন বিদ্যুৎ থাকে না। এমন অবস্থা সব এলাকায়।   

কম উৎপাদন ও সিলেট অঞ্চলে সরবরাহের ঘাটতি থাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এমন উদ্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির।

তিনি জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত শেষে হঠাৎ করে গরম পড়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় বুধবার সিলেটে লোডশেডিং বেশি ছিল।

প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। বিপরীতে সরবরাহ মিলেছে ৩৫০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে বিউবো পেয়েছে ১১৮ মেগাওয়াট এবং পল্লী বিদ্যুৎ ২৩২ মেগাওয়াট। ফলে ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। আর তা সমবন্টন করতে গিয়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়াতে হয়েছে।

এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন, গত দুই দিন ধরে রাতে কিংবা দিনে বিদ্যুতের ঝলকানি কিছু সময় স্থায়ী হলেও পরক্ষণেই দেখা দেয় লোডশেডিং। যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থায়ী হওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন বিভিন্ন অফিস-আদালতের কর্মী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং প্রকট আকার ধারণ করেছে।  

ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, সিলেটবাসী বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে কিছুতেই মুক্তি পাচ্ছেন না। গত রমজানেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে সভা সমাবেশ করেছেন তারা। গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারের সময় আলোচনায় উঠে আসে লোডশেডিং প্রসঙ্গ। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী (বর্তমানে নির্বাচিত) মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সিসিক নির্বাচন পর্যন্ত সিলেটে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও নির্বাচনের পর ফের লোডশেডিংয়ে ফিরে সিলেট।  

গত ১০ ও ১১ জুলাই বিবিয়ানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সিলেটবাসী বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে পড়েন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হলেও গরম বেড়ে যাওয়ায় আবারো বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় পড়েছেন সিলেট বিভাগের গ্রাহকরা। তারা এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।