পাবনা (ঈশ্বরদী): পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের তৃতীয় চালান পৌঁছেছে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নাটোর-কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক দিয়ে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে ঢোকে।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো আনার সময় মহাসড়কে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তাবলয় ছিল।
নিরাপত্তার জন্য নাটোর-কুষ্টিয়া মহাসড়কে ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিকল্প হিসেবে পাবনার নগরবাড়ি রোডটি সচল রাখা হয়েছিল।
পাকশী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ড. শৌকত আকবর বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রাশিয়া থেকে তৃতীয় চালানের ইউরেনিয়াম বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছায়। প্রথম ও দ্বিতীয় চালানের মতোই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আমদানি করা এ পারমাণবিক জ্বালানি সড়ক পথে রূপপুরে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও চারটি চালান দেশে আসবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট সাতটি চালানে আসা জ্বালানি দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
জানা গেছে, রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে জ্বালানি ব্যবহার হবে, তা চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া তিন বছর বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। প্রতিদিন জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। একবার জ্বালানি লোডের পর প্রথম তিন বছরের জন্য বছরে একবার করে (এক-তৃতীয়াংশ) এবং পরবর্তী সময়ে দেড় বছর পরপর জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে। ফলে জ্বালানির কারণে দেশের অন্যান্য কেন্দ্র যেভাবে বন্ধ থাকে, এখানে ওই ধরনের কোনো সংকট হবে না। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রথম চালানের জ্বালানির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় চালানের জ্বালানি রাশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।
তার আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকায় আসার পর ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার করা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীর রূপপুরে পৌঁছে। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে নাটোরের বনপাড়া ও দাশুড়িয়া হয়ে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান। ৬ অক্টোবর পৌঁছায় দ্বিতীয় চালান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মত, ২০২৪ সালের মার্চে প্রথম ইউনিটে ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। পরের বছর ২০২৫ সালের মাঝামাঝি দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। দু’টি ইউনিটে মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
বাংলাদেশ সরকার ও রাশান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি দেশের প্রথম ও একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এসআই