ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সংশয়ে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৩
সংশয়ে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র

মেঘনাঘাট থেকে ফিরে: মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে (অক্টোবর ২০১৩) বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান।



তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতিতে চেয়ারম্যানের এ প্রত্যাশাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ ও ‘দুঃসাধ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দুটি প্রয়োজনীয় জেনারেটরের একটিও এখনও এসে পৌঁছায় নি। সুইচ ইয়ার্ডের বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও পৌঁছায়নি। এ অবস্থায় যথাসময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা অসম্ভব।

ইপিসি ঠিকাদারের সাইট ম্যানেজার আশীষ পাল বাংলানিউজকে বলেন, “জেনারেটর ও সুইচ ইয়ার্ডের মালপত্র এসে পৌঁছায়নি এ কথা সত্য। এসব মালামাল চট্টগ্রাম পোর্টে এসে পৌঁছেছে বলে শুনেছি। খুব শিগগিরই এগুলো সাইটে আনা হবে। ”

তবে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান দাবি করেন, “আমরা নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে এসে রেকর্ড করতে চাই। যেমনটা আমরা মদনে কুইক রেন্টালের ক্ষেত্রে করতে সক্ষম হয়েছি। ওই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্ধারিত সময়ের ৬ দিন আগেই উৎপাদনে যেতে সক্ষম হয়েছে। ”

মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে এলে বিশ্বে রেকর্ড তৈরি হবে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে ২৪ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর আগে এত বড় বেজড লোড পাওয়ার প্ল্যান্ট এত সংক্ষিপ্ত সময়ে আসেনি। ”

সামিট চেয়ারম্যান জানান, ২০১১ সালের মে মাসে চুক্তি সই হয়। এর পর ৬ মাস সময় থাকে ফাইনান্সিয়াল পিরিয়ড। সে হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালের শুরুতে।

তিনি বলেন, “মূল সময় ব্যয় হয় ভিত্তি গড়তে, যা আমরা শেষ করে ফেলেছি। পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন শুধু যন্ত্রপাতি এনে সেট করা, যে কারণে দেখতে যাই মনে হোক না কেন, যথাসময়েই উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ”

সামিট পাওয়ারের মালিকাধীন গ্যাসভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ট্রাস্ট ব্যাংক ২ কোটি ২০ লাখ ডলার, ইসলামী ব্যাংক ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, সিটি ব্যাংক ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ব্র্যাক ব্যাংক ৫ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।

এটি নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয় ৩ টাকা ১২ পয়সা। তবে সামিটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী প্রস্তাবিত বিবিয়ানা-১ ও ২ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দর নির্ধারণ করা হয়েছে এর চেয়ে প্রায় ৫০ পয়সা কম, অর্থাৎ ২ টাকা ৬৬ পয়সা।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন আসবে সিম্পল সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট হিসেবে, যার উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২১০ মেগাওয়াট। এটি পরবর্তীতে ২০১৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টে রূপান্তর করা হবে। আর তখন এর উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ৩৩৫ মেগাওয়াটে।

এসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসা সরকারের জন্য একটি সুখবর হিসেবে বিবেচিত করা হয়। কারণ, এখান থেকে বিদ্যুৎ কিনে সরকার মুনাফা করতে পারবে। আর তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কিনলে প্রায় ১৫ টাকার মতো ভর্তুকি দিতে হয়।

সম্ভবত মেঘনা ঘাটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আর সরকারি মালিকানায় হরিপুর ৩৬০ কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট ছাড়া আর কোনো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের এই মেয়াদে উৎপাদনে আসতে পারছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৩
ইএস/ সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।