ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রামপালে একঘরে তবুও অনড়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৩
রামপালে একঘরে তবুও অনড়

ঢাকা: রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে একেবারেই একঘরে হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। একে একে সরে দাঁড়িয়েছে সবাই।

জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরাও এখন নীরব। তবুও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকার অনড় অবস্থানে।

পরিবেশবিদেরা প্রথম থেকেই বিরোধীতা করে আসছে। প্রতিবাদে সরব স্থানীয় জনগণও। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘জীবন দেব, তবুও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়’। ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস ছাপিয়ে ওঠে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবি।
 
শুরু থেকেই মহাজোটের শরীকেরাও এর বিরোধীতা করে আসছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এ বিষয়ে সাফ না জানিয়ে দিয়েছে। বাঁকি ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সম্প্রতি এরশাদও অন্যকোনো স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে এরশাদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দর ধ্বংসের পায়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকার কী আর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে কেন?
 
বিএনপি চেয়ারপারসন এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হবে। এ কথা এক নয়, একাধিকবার ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি ৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর জনসভায় আবারও একই ঘোষণা দেন তিনি।

ওই সময় খালেদা জিয়া বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সুন্দরবন। এ প্রকল্প বাতিল করতে হবে। আ.লীগ যদি বাতিল না করে, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হবে।

অন্যদিকে মহাজোটের অন্যান্য শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা শুরু থেকেই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রাজপথে মিছিল মিটিংয়েও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। এমনকি লংমার্চেও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়েছে মহাজোটের এ শরীকেরা। যে লংমার্চ থেকে প্রতিরোধ ও আল্টিমেটামে দেওয়া হয়েছে সরকারকে।

পরিবেশবিদেরা পরিকল্পনার সময় থেকেই বিরোধীতা করে আসছে। অব্যাহত রেখেছে সভা সমাবেশ, সেমিনার ও মানববন্ধন। তারা বরাবরেই বলে আসছে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরিবেশ।

পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ইআইএ’র আগে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। শীতের সময় উল্টোদিকে বাতাস বয়ে যায়। তখন সুন্দরবন থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই ও ধোয়ায় সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, এ মুহূর্তে সুন্দরবন এলাকার বাতাসে ক্ষতিকারক সালফার ও নাইট্রোজেনের মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে ঘনত্ব ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রামে গিয়ে ঠেকবে। এতে বিপন্ন হয়ে পড়বে সুন্দরবনের অস্তিত্ব।

সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও এ প্রসঙ্গে নীবর অবস্থান নিয়েছেন। সিলেট সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সাংবাদিকেরা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এ বিষয়ে স্ট্যাডি করিনি। তাই ভালো বলতে পারব না

প্রতিবাদ যখন প্রতিরোধের পথে ধাবমান। বিরোধীতা যখন তুঙ্গে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অভিমূখে লংমার্চ চলেছে তখন জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ঘোষণা দেন ২২ অক্টোবর এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। তার এ ঘোষণাকে আন্দোলনকারিদের উস্কে দেওয়া ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন বিশিষ্টজনেরা।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফেসবুক জুড়েও চলছে প্রতিবাদের ঝড়। বাদ যাননি সাংবাদিকেরাও। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হায়দার আলী লিখেছেন, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে তৌফিক এলাহীরা আ.লীগের বিদায়ের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিতে চাইছেন?

তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নির্বাচনের আগে সুন্দরবনের পাশ্ববর্তী এলাকায় রামগাঁধাদের এমন সিদ্ধান্তে অনেকের সঙ্গে আমিও অবাক। ভিত্তিপ্রস্তর দেখে মানুষ গদগদ করে আওয়ামী সরকারকে ভোট দিতে যাবে এ আশায় এমন হটকারি সিদ্ধান্ত! আমিতো মনে করি এতে আওয়ামী সরকারের ভোট কমানোর দায়িত্ব নিয়েছেন জ্বালানী উপদেষ্টা।

বিদ্যুৎ আমাদের অনেক অনেক প্রয়োজন। তাই বলে সুন্দরবন ধ্বংস করে! দেশের আর কোথাও কী এ বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা যায় না। আমিতো মনে করি এ প্রকল্পের মতো কয়েকশ বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা যাবে শুধু দক্ষিনাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়।

কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে সেই রামপালেই কেন বিদ্যু উৎপাদন কেন্দ্র বসাতে হবে। সেখানে বিদ্যু কেন্দ্র বসিয়ে কী সুন্দরবনটাকে ধ্বংস করতে চায় কোনো মহলবিশেষ। এসব রামগাঁধাদের হটকারি সিদ্ধান্তের কারণেই বর্তমান সরকারের অনেক ভালো ভালো কাজের কথাও হারিয়ে যাচ্ছে........সাধু সাবধান।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জ ই মামুন ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, আজ আপনার জন্মদিনে সেই দুঃখিনী বাংলার পক্ষ থেকে আপনার কাছে একটি বিনীত আবেদন; আপনি রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করুন।

আমাদের বিদ্যুৎ দরকার বটে, কিন্তু তা কোনোক্রমেই সুন্দরবনের দামে নয়। ইলেকট্রিক বাতির অভাব আমরা বিদ্যুতের বদলে কুপি বাতি দিয়ে হলেও পূরণ করতে পারব, তালের পাখা দিয়ে পূরণ করতে পারবো ফ্যান বা এসির অভাব, কিন্তু সুন্দরবনের অভাব আমরা এবং আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েও পূরণ করতে পারবো না। আর রামপাল ছাড়া এদেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার আর কোনো জায়গা নেই, তাও তো না!...

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের বক্তব্য তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক নয়। জনগণ বিদ্যুৎ চায় সরকারও সেদিকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৩
ইএস/এসএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।