ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুতের দাম বাড়ছে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪
বিদ্যুতের দাম বাড়ছে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

ঢাকা: বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মতি দেন তিনি।

তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম বৈঠক।

বৈঠকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসণে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুত দেশের মানুষের কাছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

এজন্য দেশে আরও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কম দামে কয়লা পেতে প্রয়োজনে বিদেশে কয়লা খনি লিজ নেয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিদ্যুৎ বিভাগ। ভোক্তামূল্যের থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অধিকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ প্রস্তাব বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় ফার্নেস ওয়েলের দাম অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ। তাছাড়া দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই জ্বালানি তেল নির্ভর।  

তবে বিদ্যুৎবিভাগ জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও প্রধানমন্ত্রী এখনই দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মতি দেননি বলে জানা গেছে।

‘শীতে বিদ্যুতের ব্যবহার কম থাকে, তাই শীতে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে গ্রাহকদের উপর চাপ কম পড়বে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শীত মৌসুমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে নির্দেশনা দেন।

পাশাপাশি মহেশখালীতে প্রস্তাবিত এলএনজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থাপন এবং বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি বৃদ্ধি ও বিদেশে কয়লা খনি লিজ নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম। তিনি বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ও বিক্রির মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। এখন বেশি দামে উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই লোকসান দিতে হচ্ছে। লোকসান ঠেকাতে দাম বাড়ানো খুবই জরুরি।

সচিবের প্রস্তাবে সায় দিলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার আগে জনগণের কথা মাথায় রাখতে হবে। জনগণের যেন দুর্ভোগ না হয় সে বিষয়টি প্রথম বিবেচ্য হতে হবে। আর একবারে না বাড়িয়ে অল্প অল্প করে বাড়ানো যেতে পারে।

প্রস্তাবিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু কয়লা আমদানি করলে চলবে না। বিদেশে কয়লা খনি লিজ নেওয়া যায় কি-না ভেবে দেখতে হবে। বিদেশে কয়লা খনি লিজ নিলে খরচ কম পড়বে আমদানি চেয়ে কম। আর সেই বিষয়টি হবে অনেক নির্ভরশীল।

তিনি আরও বলেন, দেশীয় কয়লা উত্তোলনে নানা সমস্যা রয়েছে। আমাদের জমি অনেক উর্বর, সেই জমি নষ্ট করে কয়লা তোলার আগে বিষয়টি ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

‘গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে আসছে’ উল্লেখ করে এ সময় গ্যাসের বিকল্প এলএনজি আমদানির ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তাবিত এলএনজি টার্মিনাল দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি।

বিগত মেয়াদে সরকার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এ ব্যাপারে খুব বেশিদূর যেতে পারেনি পেট্রোবাংলা। যে কারণে সম্প্রতি এলএনজি টার্মিনাল নিয়ে পেট্রোবাংলা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে রশি টানাটানি চলছিলো। তবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকেই দায়িত্ব দেন।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানান, পেট্রোবাংলাকে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খুব দ্রুতই চুক্তি সম্পাদন করা হবে। আর চুক্তি থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন একটি স্টাডি রয়েছে। সেটি পেলে কাজটি সহজ হবে বলেও মনে করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে জ্বালানি। তাই প্রথম এসেছি এখানে। ’ এ সময় বিদ্যুৎকে সবকিছুর শক্তি যোগানদাতা বলেও অভিহিত করেন তিনি।

এছাড়া বিগত ৫ বছর আন্তরিকভাবে দায়িত্বপালনের জন্য এই মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
 
পাশাপাশি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় সাধনের নির্দেশ দেন তিনি।
 
বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য স্লোগান তুলে ধরেন। তিনি প্রস্তাব করেন, ‘জ্বলছে আলো চলছে দেশ, আলোকিত বাংলাদেশ। ’ সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, ‘ঘরে ঘরে আলোর রেশ। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।