ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ মে ২০২৪, ১৯ জিলকদ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গরিবের জন্য ফ্রি বিদ্যুৎ!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪
গরিবের জন্য ফ্রি বিদ্যুৎ!

ঢাকা: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি ছাপিয়ে ওঠে দরিদ্রের জন্য ফ্রি বিদ্যুতের দাবি। ভোক্তারা  দাবি তোলেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে এগিয়ে নিতে ফ্রি বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য।

প্রস্তাব ওঠে বিনামূল্যে ২৫ ইউনিট সরবরাহের।
 
বুধবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে এ দাবি তোলা হয়। অনির্ধারিত এ আলোচনা চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খানও।
 
তিনি বলেন, করতে পারলে ভালো হতো। বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। কিছুটা হাসির রেশ টেনে বলেন, ফ্রি দিলে দেখা যাবে বড়লোকরাও ২৫ ইউনিট ব্যবহার করছেন।
 
এ সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব হাসান মুন্না বলেন, বড়লোকরা যদি কম ব্যবহার করেন, তাতেও দেশই লাভবান হবে। কারণ, সরকার বলছে তারা বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কম দামে দিচ্ছে। তাহলে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন হবে না।
 
তখন কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। আর লোকসান কমে যাবে। সবচেয়ে বেশি উপকার হবে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির। তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বড় ধরনের সহযোগিতা হবে। যাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের কাঁধেই রয়েছে।
 
এসময় আলোচনা উঠে আসে দিল্লির আম আদমি পার্টির প্রসঙ্গ। মকবুল হোসেন নামের এক ভোক্তা  বলেন, আম আদমি পার্টি ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি দিয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন ২৫ ইউনিট ফ্রি দিতে পারে না?
 
ফ্রি বিদ্যুৎ আলোচনার সূত্রপাত করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তিনি নিম্ন আয়ের লোকজনের বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বেশি প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, আপনারা ২৫ কিলোওয়ার্টের একটি ধাপ করতে পারেন
 
যারা শুধু একটি বাল্ব ২৫ ওয়ার্ট ও ফ্যান ৭৫ ওয়াট ব্যবহার করেন তাদের জন্য। দিনে ৬ ঘণ্টা চালালে মাসে ২৫ ইউনিটেই চাহিদা মিটে যাবে। তাদের জন্য নামমাত্র মূল্য ধার্য করা হোক। যাতে তাদের কষ্ট না বাড়ে। তারা আপনাদের জন্য দোয়া করবেন।
 
তার এই কথার জবাবে সামনে চলে আসে ফ্রি বিদ্যুৎ দেওয়ার দাবি। ফ্রি বিদ্যুৎ সরবরাহ ইস্যুর আলোচনায় উঠে আসে কুইক রেন্টাল প্রসঙ্গ। এ সময় বিইআরসি’র চেয়ারম্যান এআর খান বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। সরকার বাধ্য হয়ে কুইক রেন্টালে গেছে। কুইক রেন্টাল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হতে পারে না।
 
তিনি আরও বলেন, এতোদিন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিনিয়োগ করতে পারেনি। হয় বিদেশি ঋণে না হয় আল্লাহর ওয়াস্তের টাকায় বিনিয়োগ হয়েছে। বলতে গেলে ঋণেই বেশি।
 
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নিজস্ব অর্থায়নে বিবিয়ানা ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসবে বলে মন্তব করেন এআর খান।
 
রাগিব হাসান মুন্না বলেন, ভুলনীতি আর দুর্নীতির কারণে আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। গরিবের জন্য যখন ফ্রি বিদ্যুতের দাবি উঠছে, তখন বিতরণ কোম্পানিগুলো গরিবের বিদ্যুতের দামেই বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। সেই রেশ গিয়ে ঠেকেছে সংসদেও।
 
বুধবার সংসদ অধিবেশন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী গরিবের বিদ্যুতের দাম বেশি বাড়ানোর প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেন।
 
বিদ্যুতের দাম ‍বৃদ্ধির জন্য গত মঙ্গলবার থেকে গণশুনানি শুরু হয়েছে। সেদিন থেকে টানা বিক্ষোভ করে যাচ্ছে বাম সংগঠনগুলো। বিইআরসি’র কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার গণসংহতি আন্দোলন এবং বুধবার সিপিবি ও বাসদ গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
 
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই আলোচনা চলুক। একই সঙ্গে অবস্থান ধর্মঘটও অব্যহত থাকুক।

বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ৬.০৩ শতাংশ হারে বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিইআরসি’র টেকনিক্যাল কমিটি। ডিপিডিসি ২৩.৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে বিইআরসি’র কাছে। বিকালে ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শেষে প্রস্তাব করা হয় ২.০১ শতাংশ দাম বৃদ্ধির। ডেসকো ১৫.৯০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।

এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির(ওজোপাডিকো)প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়। গণশুনানিতে বিপিডিবি’র গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম  ৬.৬৬ শতাংশ ও ওজোপাডিকো’র গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম  ৭.৫১ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। বিপিডিবি ১৫.৫০ শতাংশ আর ওজোপাডিকো ৮.৫৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো।

** তোপের মুখে ডিপিডিসি-ডেসকো


বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।