ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

নাইকোর মামলায় বাংলাদেশ জয়ী

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৪
নাইকোর মামলায় বাংলাদেশ জয়ী

ঢাকা:  নাইকোর দায়ের করা মামলায় ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত ইকসিড (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউট) বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।

সোমবার এই রায়ের কপি হাতে পেয়েছেন বলে তিনি জানান।



বাংলানিউজকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, রোববার এই রায় হয়েছে। আর সোমবার তারা হাতে পেয়েছেন। নাইকো দু’টি মামলা করেছিলো। একটির চ‍ূড়ান্ত রায় দিয়েছে অপরটির বিষয়ে ডিসেম্বরে অধিকতর শুনানি হবে।

এই রায়ের ফলে নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আর কোনো বাধা থাকলো না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর জানান, ছাতক গ্যাস ফিল্ডের টেংরাটিলায় দুর্ঘটনার কারণে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর পাওনা পরিশোধ স্থগিত ও তাদের কাছে ক্ষতিপ‍ূরণ আদায়ে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ করে ইকসিডে যায় নাইকো।

২০১০ সালের জুলাইয়ে ইকসিডে মোট দুটি মামলা করা হয়। একটি গ্যাসের বকেয়া বিল আদায় সংক্রান্ত (আরবি/১০/১৮)মামলা আর অন্যটি টেংরাটিলা বিস্ফোরণে ক্ষতিপূরণের মামলা (আরবি/১০/১১)।  
 
নাইকোর প্রধান দাবি ছিল, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ২৭ দশমিক ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে গ্যাস বিল বাবদ। কিন্তু সেই বিল বাংলাদেশ সরকার পরিশোধ করছে না। বিল পরিশোধের নির্দেশনা চাওয়া হয়। অথবা সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে বাংলাদেশকে।

অন্য দাবি হচ্ছে, বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের  স্থাবর-অস্থাবর বিক্রির অনুমতি। প্রথম মামলার বিষয়ে ডিসেম্বরে অধিকতর শুনানি হবে।

আর দ্বিতীয়টি পুরোপুরি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া নাইকো তাদের স্থাবর-অস্থাবর কোনো মালামাল হস্তান্তর করতে পারবে না বলে জান‍ান তিনি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরও জানান, নাইকোর মালামাল ক্রোক করার জন্য বাংলাদেশের আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলা পরিচালনাতেও কোনো বাধা থাকলো না।

টেংরাটিলায় অনুসন্ধান কূপ খননের সময় নাইকোর অবহেলার কারণে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা বিস্ফোরণর ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ গ্যাসের ক্ষয়ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ওই এলাকার গাছপালা পুড়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এঘটনায় নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৩ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে পেট্রোবাংলা।  

যদিও পেট্রোবাংলার ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে পরিবেশবাদীদের বেশ আপত্তি রয়েছে। তাদের বক্তব্য, প্রকৃত ক্ষতির চেয়ে অনেক কম দেখানো হয়েছে।

নাইকোর কাছে ক্ষতিপ‍ূরণ দাবি করলে তারা তাতে সাড়া দেন নি। পেট্রোবাংলা বাধ্য হয়ে ২০০৮ সালের ১৫ জুনে জজকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে পরিবেশ আইনজীবীদের সংগঠন বেলা নাইকোর চুক্তি চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করে।

ওই মামলার রায়ে জরিমানা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের মূল্য পরিশোধ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন আদালত। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্ত হয় বহুজাতীয় কোম্পানি নাইকো। তবে হাইকোর্ট আগের রায় বহাল রাখে। এ কারণে ২০০ কোটি টাকা বিল দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে বাংলাদেশ।

একই সঙ্গে নাইকো রিসোর্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সম্পত্তি ক্রোক (জব্দ) করতে ঢাকা জেলা জজকোর্টে আবেদন করেছে বাংলাদেশ। সে মামলাটিও বিচারাধীন রয়েছে।

আবেদন নাইকোর ব্লক ৯ এর স্বত্ব, সকল স্থাবর, অস্থাবর, বাঙ্গুরা গ্যাস ফিল্ডের শেয়ার, বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

ফেনী গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস সরবরাহের বিলবাবদ নাইকোর পাওনা ২৭ দশমিক ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৪, আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।