ঢাকা: সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌবাহিনী, শিল্প মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার্যক্রমে জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সমুদ্রের তেল-গ্যাস ব্লকসমূহ কোনো একক কোম্পানিকে ইজারা না দেওয়ার বিষয়টিও পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
এদিকে, সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বাপেক্সের অংশগ্রহণের ফলে অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করা হবে। দেশি কোম্পানির কর্মকর্তাদের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের বিষয়ে প্রশিক্ষণেরও সুযোগ রাখা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, সমুদ্র সম্পদ আহরণে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তারা। এ জন্য নতুন করে সমুদ্র সার্ভে করছি। সার্ভের ফলাফল আগামী বছর আমাদের হাতে আসবে। এর ফলে তেল-গ্যাস ব্লকসমূহ একাধিক বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া যাবে। এতে একক বিদেশি কোম্পানি দুই থেকে তিনটা ব্লক না পায় সেই হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।
একক কোম্পানিকে একাধিক ব্লক লিজ না দেওয়ার বিষয়েও তারা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, সমুদ্র-সম্পদ আহরণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মনিটারিং করছেন। কয়েক মাস পর এই বিষয়ে সভা হবে।
অন্যদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ও গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সে লক্ষে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) হাতে নেওয়া হবে। নদীর মোহনায় জেগে উঠা নতুন চর স্থায়ী করার জন্য নানা কার্যক্রমও গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ১ কোটি ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৮’শ একর ভূমি বনায়নের পর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে এ জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় নতুন চর জেগে উঠা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিতকরণ, জেগে উঠা নতুন চরসমূহকে স্থায়ীকরণেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে আমাদেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রের কাছাকাছি ও নদীর মোহনায় জেগে উঠা চরে বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে মিল রেখে চরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে চরের স্থায়ীত্ব বাড়বে।
জানা যায়, দেশের সমুদ্রসীমায় বিদেশি ট্রলার/জাহাজের অনুপ্রবেশ এবং অনুমোদিত ফিশিং রোধে নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশের মনিটরিং জোরদারকরণের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রসীমায় মৎস্য সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি ট্রলারের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে।
অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিজিত ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সাগরে মৎষ্য সম্পদের প্রজাতিভিত্তিক মজুদ, বিস্তৃতি, প্রাচুর্যতা, গভীরতাসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্ধারণেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ জন্য বরগুনা জেলায় শিপ বিল্ডিং এবং রিসাইক্লিং গড়ে তুলবে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর থেকে নদীপথে কন্টেনার পরিবহন করা হবে। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নে পায়রা নদীর মোহনায় জাহাজ নির্মাণ শিল্প স্থাপন করা হবে।
সমুদ্র সম্পদ আহরণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। সমুদ্র সম্পদ রক্ষা, সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকা ও গভীর সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। সে লক্ষে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অপারেশন্স পরিদপ্তর উপকূল ও সমুদ্রে নজরদারি বৃদ্ধি করবে। চারটি মিডিয়াম হেলিকপ্টার সম্বলিত একটি এভিয়েশন উইং খোলারও উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া দুটি পেট্রোল ভেসেল, দুটি ফাস্ট পেট্রোল বোট ও দুটি হারবার পেট্রোল বোটও কেনা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্র সীমানা এবং সেন্টমার্টিন থেকে এলিফেন্ট পয়েন্ট পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার এলাকায় নজরদারী স্বক্ষমতা বাড়ানো হবে। সে লক্ষে ৫০৮ জন জনবল নিয়োগসহ ১৩টি হাই স্পিডবোট কেনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
এমআইএস/এসআর