ঢাকা: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে চায়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমছে না।
জ্বালানি বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে তিনি জানিয়েছেন, ‘আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যদি আরও কয়েক মাস কম থাকে তাহলে দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে’।
বিপিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, দাম কমানোর চাইতে তারা দাম সমন্বয় করার কথা সক্রিয় বিবেচনা করছেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দেশের বাজারে দাম কমে যাবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দামের বর্তমান সিস্টেমের চেয়ে দাম সমন্বয় করার সিস্টেম চালুর বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে সরকার।
শুক্রবার (৮ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কেমন বাজেট’ শীর্ষক এক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
২০১৩ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের (ক্রুড অয়েল) দাম উঠেছিলো ১২২ ডলার। সেই বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ৪ জানুয়ারি ‘লোকসান যাচ্ছে’ --একথা বলে পেট্রোল-অকটেন লিটারপ্রতি ৫ টাকা ও ডিজেল কেরোসিন লিটারপ্রতি ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছিলো।
সেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এখন অর্ধেক অর্থাৎ ৬৭ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিলো (৫০ ডলার)। তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়াতে তোড়জোড় দেখা গেলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরও দেশীয় বাজারে দাম কমানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিপিসি দীর্ঘদিন ধরে বেশি দামে জ্বালানি তেল আমদানি করে কম দামে বিক্রি করেছে। সে কারণে অনেক লোকসানে রয়েছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি বলেন, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেল দাম কমে যাওয়ায় কিছুটা লাভ হচ্ছে। যা দিয়ে পুঞ্জিভূত লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিপিসি। তবে বাজার স্থিতিশীল থাকলে দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
বিপিসির একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জ্বালানি তেলের কোনো পণ্যেই এখন লোকসান হচ্ছে না। তবে কোন পণ্যে কত লাভ হচ্ছে তা হিসাব না করে বলা কঠিন।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছর বিপিসির ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছে চার হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। কেনা-বেচায় বিপিসি লোকসান করলেও রাষ্ট্রের মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ৪৭ কোটি টাকা।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশের বার্ষিক জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিলো ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল, আর প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৫৪ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৫
জেএম
** এতো তেল যায় কোথায়!