ঢাকা: আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) উচ্চ সুদে ঋণগ্রহণ ও ঠিকাদার নিয়োগে জালিয়াতির ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রথম বৈঠক বসছে বোরবার (০৭ জুন) বিকেলে।
প্ল্যানিং কমিশনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউস বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, প্রথম বৈঠকে তারা কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে চান, কীভাবে তদন্ত কাজ এগিয়ে নেবেন।
আমেরিকার যে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, সেই ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির অপর এক সদস্য।
এপিএসসিএল’এ উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ ও ঠিকাদার নিয়োগ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৬ মিলিয়ন ডলার উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ২ মিলিয়ন ডলার সানফ্রান্সিসকো শহরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি নিউজ বাংলানিউজ ও দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় (২৫ মে, সোমবার)।
ওই সংবাদদের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান করা হয় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্তু খানকে।
কমিটিতে আছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (Shitangshu Kumar Sur Chowdhury), বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব হুমায়ুন কবীর ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রকাশিত খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম দিকে বিদ্যুৎ বিভাগের তোড়জোড় দেখা গেলেও এখন কিছুটা ভাটার টান দেখা যাচ্ছে। প্রধান অভিযুক্ত বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এপিএসসিএল’র চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছিল, যাতে তদন্ত প্রভাবিত করতে না পারেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই উদ্যোগ থেকে কিছুটা সরে এসেছে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এপিসিএল’র ৪৫০ মেগাওয়াট সাউথ পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য হেজিং পদ্ধতিতে এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ও ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার জন্য সাড়ে তিন শতাংশ হারে সুদ গুণতে হবে বাংলাদেশকে।
অন্যদিকে, একই ঋণ লাইবর পদ্ধতিতে নেওয়ার সুযোগ ছিল। লাইবর পদ্ধতিতে সুদের হার দশমিক চার শতাংশ বিরাজ করছে। ১৯৯৯ সাল থেকেই নিম্নমুখী এই সুদের সূচক।
অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে গোপন লেনদেন করা হয়েছে। সানফ্রান্সিসকো শহরের ‘ওয়েলস ফারগো’ ব্যাংকের একটি শাখায় এপিএসসিএল’র সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছেলে মাহফুজ আলমের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এই লেনদেন হয়েছে।
স্পেনের একটি ব্যাংক থেকে দুই মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার (পাঠানো) করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিটটির নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে, একটি স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান। সে কারণে সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে। এ ছাড়া নিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে বেশি দরে কাজ দেওয়ার বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৫
ইএস/এবি
** বিনিময় ছয় মিলিয়ন, দেশের ক্ষতি ৪৫ মিলিয়ন