ঢাকা: গ্যাসচালিত ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট নির্মিত হয়েছিলো ১৯৮৯ সালে। একে একে ২৬ বছর পার করেছে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটটি।
এ পরিস্থিতিতে ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিটকে পুনঃক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো, বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থিতিশীলতা ও এর নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে আসছে ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প।
প্রকল্পের ব্যয় ও সময় নির্ধারণ করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায়। প্রকল্পের পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন সদস্য (সচিব) এসএম গোলাম ফারুক।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৯০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি নিজস্ব অর্থায়ন ৫৫৯ কোটি, প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৮০৪ কোটি এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) দেবে ১২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৯ সাল নাগাদ।
অন্যদিকে প্রকল্প প্রসঙ্গে বিপিডিবি সূত্র জানায়, গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইফ টাইম মাত্র ২৫ বছর। বিদ্যুৎ কেন্দ্র রি-পাওয়ারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাসের কার্যকর এবং দক্ষতাপূর্ণভাবে ব্যবহার করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দক্ষতা উন্নয়ন, দূষণ নির্গমন কমানোর পাশাপাশি প্রকল্পটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।
প্রকল্পের আওতায় কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের কাজের পাশাপাশি নানা ধরণের যন্ত্রাংশ কেনা হবে। খুচরা যন্ত্রাংশ ও ডিজেল জেনারেটর সেটসহ গ্যাস টারবাইন জেনারেটর ইউনিট এবং গ্যাস বুস্টার কম্প্রেসন ইত্যাদি সরবরাহ এবং স্থাপন করা হবে। বিদ্যমান চতুর্থ ইউনিট ২০০ মেগাওয়াট স্টিম টারবাইন জেনারেটিং ইউনিটে প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন কাজ করা হবে।
বর্তমানে যে গ্যাস পুড়িয়ে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, ইউনিটটির পুনঃক্ষমতায়নের ফলে একই গ্যাসে ৪০০ মেগাওয়াটের অধিক বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানায় বিপিডিবি।
ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী খিরদ মোহন বসু বাংলানিউজকে বলেন, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিটের লাইফ টাইম শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ২৬ বছর পার করেছে ইউনিটটি। এখন যে গ্যাস পুড়িয়ে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি এটি পুনঃক্ষমতায়ন করলে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবো। তাই গ্যাসের অপচয়রোধে পুনঃক্ষমতায়ন ছাড়া অন্যকোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গরম হয়ে পড়ছে, ফলে অনেক যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাচ্ছে। তাই যত দ্রুত ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং করা যায় ততই মঙ্গল। ’
বিপিডিবি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় হিট রিকভারি স্টিম জেনারেটর সেট(এইচআরএসজি) সরবরাহ ও স্থাপন করা হবে। গ্যাস টারবাইনের জন্য স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার, সুইচ গিয়ার, অক্সিলিয়ারি ট্রান্সফরমার ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে।
রি-পাওয়ার ইভ্যাকুয়েশন সিস্টেম রিনোভেশন এবং নতুন গ্যাস টারবাইন ইউনিটের জন্য ইভ্যাকুয়েন সিস্টেম(জিআইএস) তৈরি করা হবে।
নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে বলে জানায় বিপিডিবি। বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে ১৭’শ মেগাওয়াট এবং ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে।
এর অংশ হিসেবে ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০ সালে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জানায় বিপিডিবি।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এমআইএস/আরআই