ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

২৩ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য

খরচ হচ্ছে না ২১৯৩ কোটি টাকা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
খরচ হচ্ছে না ২১৯৩ কোটি টাকা!

ঢাকা: ২০১৫-১৬ অর্থবছরের (জুন-জুলাই) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে(এডিপি) অন্তর্ভুক্ত বিদ্যুৎ বিভাগের ৭০টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩টির কোনো অগ্রগতি নেই। চলতি অর্থবছরের ছয়মাস অতিবাহিত হলেও এসব  উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পযর্ন্ত সংশ্লিষ্টরা একটি টাকাও খরচ করতে পারেনি।



এ কারণে প্রকল্পগুলোর পরিচালকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ।

এডিপি’র মোট বরাদ্দ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের ২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাচ্ছে। কারণ, মোট এডিপি বরাদ্দের অর্থ খরচ করার মতো সামর্থ্য নেই বিদ্যুৎ বিভাগের। বরাদ্দকৃত অর্থ খরচে অপারগতা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশোধিত এডিপি’তে (আরএডিপি) ২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা কম প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।

এডিপি বরাদ্দের অর্থ খরচ না করতে পারা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ভূমি অধিগ্রহণে নানা সমস্যা হয়েছে। প্রকল্পে ডোনারদের যাচাই কাজ দেরিতে হওয়ার কারণে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়েছে। এডিপি’তে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ ১৬ হাজার ১২১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার মধ্যে ২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ করতে পারছি না। আমাদের হাতে সময় আছে মাত্র ছয়মাস। এই সময়ে যে অর্থ খরচ করতে পারবো। তাই বরাদ্দ চেয়েছি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।

তিনি আরও বলেন, এডিপি’তে পিএ(প্রকল্প সাহায্য) টাকা কম খরচ হয়েছে। কারণ, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রসেসিংয়ের দরকার পড়ে। তবে জিওবি(সরকারি নিজস্ব অর্থায়ন) অর্থ খরচের পরিমাণ ভালো। এবার এডিপি বাস্তবায়ন একটু খারাপ হলেও পরবর্তী সময়ে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।

বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে দেখা গেছে, এডিপিভুক্ত মোট ৭০টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩টি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের অনুকূলে এখনো কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, ১৯টি প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে এবং ২৮টি প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫ শতাংশের ওপরে।

অথচ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, চলতি অর্থবছরে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হবে। মূল এডিপি’র ৭১ শতাংশ ১০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে এডিপি বাস্তবায়নের হার।

১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অন্যতম বিদ্যুৎ। এ বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এডিপি’তে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলোর অনুকূলে মোট ১৬ হাজার ১২১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৯ হাজার ১৮৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

প্রকল্পগুলোর বিপরীতে চলতি অর্থবছরে(২০১৫-১৬) ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পযর্ন্ত ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩৯৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
 
ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা (২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ) এবং সরকারি অর্থ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি ছিল যথাক্রমে ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ।

১০টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অন্যতম বিদ্যুৎ বিভাগ। অথচ এই বিভাগ এডিপি’তে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারায় সংশোধিত এডিপি’র জন্য মোট ১৪ হাজার ২৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মূল এডিপি’র তুলনায় প্রায় ২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা অথবা ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। এর ফলে এই অর্থ বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানা গেছে,  বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে মূল এডিপি বরাদ্দে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংস্থা প্রধান ও প্রকল্প পরিচালকদের নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল এডিপি বরাদ্দের সমস্ত অর্থ ব্যয় করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া  প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

অন্যদিকে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে তাদের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিকুল  আজম বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অধিক বরাদ্দ নিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি তাদের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হবে। যারা এডিপি বাস্তবায়নে ভালো পারফর্ম করবে তাদেরই বেশি বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা চিন্তা করেছি। আপনারা (মন্ত্রণালয় ও বিভাগ) অধিক বরাদ্দ নেবেন, অথচ খরচ করতে পারবেন না, তা হতে পারে না। এটা চলতে থাকলে যারা এডিপি বাস্তবায়নে ভালো পারফর্ম করবে তাদের বঞ্চিত করা হবে’।

এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে সচিব বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এমন অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো গুরুত্বহীন। অথচ বছরের পর বছর মন্ত্রণালয়গুলো এসব প্রকল্প টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব প্রকল্প একেবারে বাদ দিয়ে নতুন করে আমরা চিন্তা করবো। গুরুত্বহীন প্রকল্পে বরাদ্দের কোনো মানে নেই। শুধু খামাখা বয়ে বেড়ানোই হয়’।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।