ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প উদ্বোধনে আসতে পারেন পুতিন

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প উদ্বোধনে আসতে পারেন পুতিন

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজের উদ্বোধনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আনার চেষ্টা হচ্ছে। আগামী বছরের জুনে রূপপুর প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধন হবে।

পুতিনকে দিয়ে মূল কাজের উদ্বোধন করাতে চায় সরকার।

রাশিয়ার প্রযুক্তি, অর্থায়ন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে পাবনার ঈশ্বর্দীর রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই এই প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহের অর্থ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল কাজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দিয়ে উদ্বোধন করানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ কারণে এ প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় পুতিনকে ঢাকায় আনার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে ভ্লাদিমির পুতিনও ব্যক্তিগতভাবে আন্তরিক। এ কারণে পুতিনকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করাতে চায় সরকার। তবে পুতিনের বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে না পারলেও সরকার অনেকটা আশাবাদী বলে সূত্র জানায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানও এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাচ্ছি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দিয়ে মূল কাজের উদ্বোধন করাতে। তার আসার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পুতিনের আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এ প্রকল্পের ব্যাপারে তিনি খুবই আন্তরিক। নিজে সার্বক্ষণিক এ প্রকল্পের খোঁজখবর রাখছেন। তাছাড়া আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) বিরাট ভ‍ূমিকা রয়েছে। দেখা যাক কি হয়।

এদিকে রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজ শুরু হবে ২০২২ সালে। এই প্রকল্পে ৮০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। প্রথমে টানা ৬০ বছর পরবর্তিতে আরও ২০ বছর মোট ৮০ বছর উৎপাদন কাজ চলবে। এই পারমাণবিক প্রকল্পে ২ হাজার ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের সর্বমোট ব্যায়ের ৯০ শতাংশ অর্থ দেবে রাশিয়া। বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। রাশিয়ার দেওয়া অর্থ পরিশোধের সময় দেওয়া হবে ২৮ বছর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৩ সালে মস্কো সফরের সময় রাশিয়ার সাথে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে প্রযুক্তি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই সময়েই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। রূপপুরে তৈরি করা হচ্ছে প্রকল্পের নানা অবকাঠামো। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের সঙ্গে রাশিয়ার ১৪ থেকে ১৫ শ’ লোক সম্পৃক্ত হবেন। তাদের থাকার জন্য সেখানে দু’টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষে ওই লোকজন চলে যাওয়ার পর দেশীয় যে জনবল এখানে নিয়োগ হবে ওই ভবনগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরির জন্য ৪/৫টি কারখানা বসানো হচ্ছে।

পারমাণবিক প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি আনা হবে রাশিয়া থেকে। জ্বালানির বর্জ্য রাশিয়া নিয়ে যাবে। এই জ্বালানি আনা-নেওয়া করা হবে নৌ পথে। এ জন্য একটি জেটি তৈরি করতে হবে। প্রকল্পের কাজের সঙ্গে সরাসরি প্রশাসনিক এবং পর্যবেক্ষণ কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত হবেন তাদের অনেককে রাশিয়ায় নিয়ে সেখানকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১০ জন সচিবকে রাশিয়ায় নিয়ে এই ধরনের প্রকল্প সম্পর্কে ধারাণা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে আরও বলেন, আমরা অনেক বড় একটা কাজে হাত নিয়েছি যা সহজে বোঝা খুব কষ্টকর ব্যাপার। এই প্রকল্প সম্পর্কে আগেই যাতে একটা সম্যক ধারণা থাকে সে জন্য রাশিয়া আমাদের লোকজনকে নিয়ে তাদের প্রকল্প দেখাচ্ছে। রূপপুরে প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। এখানে একটি শহরের মতো গড়ে উঠবে। সেভাবেই মাস্টার প্লান তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।