এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের ভারী মালামাল নিরাপদে ও দ্রুত প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে নেয়া এই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে ১০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
অন্যদিকে ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেল লাইন নির্মাণ ও সংস্কার’ প্রকল্পে।
প্রকল্প দু’টি মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্প দু’টি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প দু’টি প্রসঙ্গে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য(সচিব) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যু সঞ্চালনের জন্য বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। এটিসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট মোট দু’টি প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। ’
‘শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত মালবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর জন্য নতুন করে ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে। এর মধ্যে ব্রডগেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হবে ১৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার। এই বিষয়েও নতুন একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে।
নতুন ৬৬৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ব্যয়ের বিদ্যুৎপ্রকল্প হচ্ছে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানকার দুই ইউনিট থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে ৬৬৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ কেন্দ্রটি নির্মাণে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দেবে সরকার।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে। এরপরই উৎপাদনে যাবে ইউনিটটি। সেখান থেকে উৎপাদিত হবে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে। মোট ৬৬৯ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার হবে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন।
লাইনটি রূপপুর থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘবাড়ি পর্যন্ত স্থাপন করা হবে। এছাড়া ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে ৬০৯ কিলোমিটার।
৪০০ কেভির দীর্ঘ লাইনটি দেশের অন্যান্য এলাকাতেও যাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী, রূপপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৫৪ কিলোমিটার, আমিনবাজার থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে।
এছাড়া রূপপুর থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার, বগুড়া পর্যন্ত ১০২ এবং মানিকগঞ্জের ধামরাই পর্যন্ত ১৫২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালণ লাইন নির্মিত হবে। এসব লাইন স্থাপনে ১১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন রেলপথ ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নতুন রেলপথটি নির্মিত হবে।
এছাড়াও সাড়ে ৪ কিলোমিটার লুপ লাইন, একটি বি শ্রেণির রেলওয়ে স্টেশন, সাতটি কালভার্ট, ১৩টি লেভেল ক্রসিং ছাড়াও গেটসহ থাকছে সিগন্যালিং ব্যবস্থা।
ঈশ্বরদীর ৩৭ নম্বর লেভেল ক্রসিং গেট থেকে পরিত্যক্ত পাইলট লাইন পর্যন্ত নতুন করে আরও ৯ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য রেলপথ সংস্কার করা হবে। প্রকল্প দু’টি জানুয়ারি ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৮
এমএস/ জেএম