ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ২ লাখ টাকা বিল! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৮
বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ২ লাখ টাকা বিল!  ভুয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: খুঁটি, লাইন ও মিটার কোনটাই নেই। তবুও ৪৩ ব্যক্তির নামে বিল এসেছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকা। 

ভুয়া বিল বাতিল করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বিকেলে আদিতমারী উপজেলার মহিষাশ্বহর বাজারে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের বিদ্যুতহীন ৩৩ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তিন বছর আগে আবেদন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ শাখায়।

আবেদনের পর স্থানীয় বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১২/১৫ হাজার টাকা বুঝে নেন এবং তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিন বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও খুঁটি, লাইন বা মিটার কোনটাই পায়নি তারা।

এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বেসরকারি খাতে চলে যায় এবং বিধি মতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতেই বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি।

এদিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের জন্য ৩৩টি মিটার পাঠান দালাল সাইফুল ইসলাম। খুঁটি বা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটারগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে গত জুন মাসে ওই গ্রামের ৪৩টি পরিবারের নামে জনপ্রতি ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো।  

বিদ্যুৎ বিল দেখে হতভম্ভ পরিবারগুলো বিলের কাগজপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে এর সমাধান দাবি করলেও কোনো কাজ হয়নি। তাই এসব ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত লাইন সংযোগ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

বিদ্যুতের মিটার হাতে এলাকাবাসী।  ছবি: বাংলানিউজওই গ্রামের লুৎফর রহমান ও জসির মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে তার প্রতিবেশী বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম ১৫ হাজার টাকা নেন। বিদ্যুতের জন্য কেউ কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে দালালকে টাকা দেন। কিন্তু আজ কাল বলে তিন বছর পার হলেও কোনো কাজ হয়নি। উপরন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও ৫ হাজার ৯৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল চলে আসে তাদের নামে। বিল পরিশোধ না করলে মামলায় জড়ানোর অাতঙ্কে ভুগছেন তারা।

মহিষাশ্বহর গ্রামের আব্দুল হাই, মতিন, জহুরুল, মজমুল ও বাবুল বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সবাই আবেদন করে ঘুষ দিলেও তারা আবেদন করেননি। অথচ তাদের ১০ জনের নামেও ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল চলে আসে। ব্যবহার না করেও বিদ্যুতের এ ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত সংযোগ ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

ওই এলাকার বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আবেদনকারীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা বিদ্যুৎ অফিসের ঠিকাদার রেজাউলের মাধ্যমে অফিসে দিয়েছেন। তবে সংযোগ না দিতে বিল আসায় তিনিও হতভম্ব হয়েছেন। তারও জানা নেই বিলগুলো কেন পাঠানো হয়েছে বা পরিশোধ না হলে কি হবে এসব পরিবারের।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো কালীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহানুর ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, যদিও বাস্তবে সংযোগ নেই। তবুও এসব গ্রাহকের নামে ১৫ সালের জানুয়ারি মাসে কাগজ কলমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেখানোর কারণে তাদের নামে নুন্যতম হিসাব অনুযায়ী বিল পৌঁছেছে। যেহেতু তারা ব্যবহার করেনি। তাই আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের এসব বিল মওকুফ করা হতে পারে। তবে এসব গ্রাহক আদিতমারী উপজেলা তথা পল্লী বিদ্যুৎ অঞ্চলের আওতায় পড়ায় তাদের নেসকোর সংযোগ দেয়ার কোনো নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।