শনিবার (১৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বোরিচভ দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ) পরিচালক দহী হান, রাশিয়ার কৃষি উপমন্ত্রী ইলিয়া শেস্তাকফ, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থার (রোসাটম) ডেপুটি ডিরেক্টর অালেক্সান্ডার লাক্সি, ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান অভিলাস ভরদ্বাজ প্রমুখ৷
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধিরী, ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা আণবিক শক্তি কর্পোরেশনের (রোসাটম) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়েক্টর ভবনের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে ইউনিটটির মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ১২শ’ একর জমির উপর নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বৃহৎ ও ব্যয়বহুল প্রকল্প।
এর আগে গত বছর ৩০ নভেম্বর এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করা হয়। প্রথম ইউনিটের এই কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে (নিউক্লিয়ার নেশন) যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বপরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য দেশ। বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুতের ইউনিট চালু আছে।
এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার মেগাওয়াট (৩৯২ গিগাওয়াট)। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাংলাদেশে নির্মাণাধীন এই দুটি ইউনিট ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও ৬০টি ইউনিট নির্মাণাধীন রয়েছে। এই ইউনিটগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা সর্বমোট আরও প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণে সরবরাহ করছে রাশিয়া। এই প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের ‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
দুই ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৪,০০ মেগাওয়াট। আগামী ২০২৩ সালের প্রথম ইউনিটটি এবং পরের বছর ২০২৪ দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে টানা ৬০ সছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এরপর অতিরিক্তি আরও ২০ বছর উৎপাদন কাজ চলবে। এছাড়া এই প্রকল্পে ভবিষ্যতে আরও দইটি ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জায়গায়ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বর্তমানে ২২০০ কর্মী কাজ করছেন। এর মধ্যে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ৪৫০ জন। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল কাজে যুক্ত হবেন ১২৫০০ জন। এর মধ্যে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫০০ জন যুক্ত থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ