শনিবার (১৪ জুলাই) রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বোরিচভ দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে কোনো কোনো মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন। বিশেষ করে এর নিরাপত্তা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে, অনেক উন্নত হয়েছে। রাশিয়ার সর্বশেষ জেনারেশন থ্রি প্লাস প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ কেন্দ্র। পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে এ রিঅ্যাক্টরে। জনগণের জন্য কোনো ঝুঁকি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে গ্রহণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ আমরা দিচ্ছি আমাদের লোকজনকে। আমাদের সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রশিক্ষিত আলাদা একটি ইউনিট গঠন করছি। এজন্য রাশিয়ায় যেমন প্রশিক্ষণ হচ্ছে, ভারতেও প্রশিক্ষণ চলছে।
তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যও নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব রাশিয়া নিয়েছে। কাজেই কারো কোনো আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্যও আমরা নিজস্ব জনবল তৈরি করছি।
বাংলাদেশ পরমানু শক্তি শান্তির জন্য ব্যবহার করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা আণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়েক্টর ভবনের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে ইউনিটটির মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ১২শ’ একর জমির উপর নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বৃহৎ ও ব্যয়বহুল প্রকল্প।
এর আগে গত বছর ৩০ নভেম্বর এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করা হয়।
প্রথম ইউনিটের এই কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে (নিউক্লিয়ার নেশন) যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য দেশ। বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুতের ইউনিট চালু আছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন হিসেবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমাদের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক, এটা আমরা চাই। আমরা এই অগ্রগতি অব্যাহত রাখবো।
কাজের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে সমর্থ হবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করি, ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট থেকে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে আমাদের জাতীয় গ্রিডে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ আসবে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই আমরা বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তার ফলেই আজ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। কোনো লোডশেডিং নেই। ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছেন।
তিনি বলেন, যেখানে এখনও বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন পৌঁছেনি সেখানে সোলার হোম সিস্টেম চালু করা হয়েছে। সারাদেশে বর্তমানে ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম আছে।
রাশিয়াকে সুসময়ের বন্ধু ও দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
রাশিয়ার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশকে শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতাই করে নাই, যুদ্ধের পরে দেশ গড়ে তোলার কাজেও সহযোগিতা করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে পোতা মাইন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অপসারণে করতে গিয়ে রাশিয়ার কয়েকজন আত্মত্যাগ করেছে।
তিনি বলেন, সেই রাশিয়া আজ আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতা করছে। আমি ২০১৩ সালে রাশিয়া সফরে পুতিনের সঙ্গে কথা বলি। তখন তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত যেসব পরিকল্পনা ছিলো সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। ২০২১ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত কিভাবে দেশকে এগিয়ে নেবো তার একটা খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। আমি সেটা একবার দেখেছি। আমরা পরিকল্পনা তৈরি করছি।
তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবো, কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ) পরিচালক দহী হান, রাশিয়ার কৃষি উপমন্ত্রী ইলিয়া শেস্তাকফ, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থার (রোসাটম) ডেপুটি ডিরেক্টর আলেক্সান্ডার লাক্সি, ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান অভিলাস ভরদ্বাজ প্রমুখ৷
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধিরী, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
** রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২য় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই শুরু
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮, আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা
এসকে/এমইউএম/আরবি/