প্রকল্পটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে প্রকল্পটির জন্য নিম্নমানের মালামাল কেনা, এবং পরিবহন খাতের বিশাল একটি অঙ্ক আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এদিকে প্রকল্পের ১১০ কোটি টাকা ছাড় করিয়ে ঠিকাদাররা কাজ শুরু করেছেন। সেই টাকায় প্রকেল্পর মালামাল কিনে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগে আনার কথা। সংশ্লিষ্ট পিপি ও চুক্তিপত্রে তাই উল্লেখ আছে।
কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিপত্রের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মালামাল কিনে চট্টগ্রামের ফৌজদার হাটে রেখেছে। এতে একদিকে যেমন চুক্তিপত্রের নিয়ম অমান্য করা হয়েছে, অন্যদিকে রাঙামাটিতে মালামাল আনার জন্য পরিবহন খাতের ট্রাক প্রতি ১০ হাজার টাকা (সংশ্লিষ্টদের মতে) পকেটে ঢুকানোর পাঁয়তারা চলছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল বড়ুয়া এক প্রশ্নের জবাবে বাংলানিউজকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো আমরা কাজ করছি।
এসময় ফৌজদার হাটে রাখা প্রকল্পের মালামালগুলো পুনরায় রাঙামাটিতে নিয়ে আসতে যে পরিবহন ব্যয় হবে সেটা সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাকি আপনারা বহন করবেন এমন প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
অপরদিকে, এই প্রকল্পে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত স্থানে মালামালগুলো একবারই পৌঁছে দেবো।
পিডিবি’র তথ্যে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ৫শ’ কোটি টাকা এবং ২০১২ সালে ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে রাঙামাটির পিডিবি’র স্টোরকে ব্যবহার করা হয়েছিলো।
কিন্তু বর্তমানে চলমান প্রকল্পের তিন জেলায় (রাঙামাটি. খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান) প্রকল্পের মালামালগুলো রাঙামাটি স্টোরে রাখার কথা থাকলেও রাখা হচ্ছে ফৌজদারহাট স্টোরে। কিন্তু রাঙামাটির স্টোর রুম সংকুলান এবং দূরত্ব দেখিয়ে ফৌজদারহাটে রাখা মানে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে উল্লেখ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেকে।
এদিকে, প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে এবং বিপরীতে ১১০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন ওই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মতিউর রহমান।
মালামালগুলো রাঙামাটি স্টোরে রাখার জন্য চুক্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এমন প্রশ্নে পিডিবি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটিতে এ প্রকল্পের মূল অফিস হলেও মাসের অধিকাংশ সময় এই কর্মকর্তা কার্যালয়ে আসেন না বলে দাবি করেছেন তার সহকর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রামে বসেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তার প্রকল্পের কাজকর্ম।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার মোট আয়তন প্রায় ১৩ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার। প্রকল্পানুযায়ী জনসংখ্যা ধরা হয়েছে ১৪ লাখের বেশি।
সূত্রটি আরো জানায়, বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে ৮৬ হাজার ৫৬৪ গ্রাহকের জন্য লোড চাহিদা রয়েছে ৫৪ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট। সরবরাহকৃত লাইনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৯৯ মেগাওয়াট। প্রতিবছর লোড চাহিদা বৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই এলাকার লোড চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৭৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ১ লাখ ৭৩ হাজারে।
এ লক্ষ্যেই ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি একনেকের সভায় তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুতায়নের জন্য ৫৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৮
আরএ/