ফলে ওই প্রকল্পের অধীনে এই বিভাগে মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭ লাখ ১০ হাজার। প্রকল্পের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৭০ হাজার।
‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট) শীর্ষক চলমান প্রকল্পের আওতায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বাড়তি গ্রাহককে সুবিধা দিতে প্রকল্পের সময়-ব্যয়ও দুটোই বাড়ছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) সূত্র জানায়, দেশের সব ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎহীন গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকায় ৭৭ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন বসানো হবে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন সমগ্র দেশকে পূর্ব ও পশ্চিম এ দুই ভাগে ভাগ করে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের জন্য নেয়া ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালর জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদ বাস্তবায়নের সময় নির্ধারিত ছিল।
প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২১ পযর্ন্ত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
বাপবিবো সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের অক্টোবর পযর্ন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ৮ হাজার ৭৪০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন, ৮টি নতুন উপকেন্দ্র এবং তিনটি বিদ্যমান উপকেন্দ্রের ক্ষমতা অতিরিক্ত ৩০ এমভিএ করা হবে। অতিরিক্ত গ্রাহকসেবা দিতে মূল প্রকল্প থেকে সংশোধিত প্রকল্পে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরামর্শক সেবা খাতে বাড়ছে। এসব কারণেই প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ছে।
বাপবিপোর এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘চলমান প্রকল্পের আওতায় চার বিভাগের ২৪০টি উপজেলার মধ্যে ২০১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট ৩৯টি উপজেলায় জুন ২০২০ সালের মধ্যেই বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। প্রকল্প এলাকার উপজেলাসমূহে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং অর্জিত অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিবরণ সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে চলমান অন্যান্য প্রকল্পের পাশাপাশি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিদ্যমান এলাকার শতভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের সুবিধা পাবে। ’
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে কয়েকটি সংস্থা কাজ করলেও গ্রামীণ ও মফস্বলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ করছে পবিবো। শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সরকার ১৯৭৬ সালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গঠন করে। বোর্ড সমবায় ভিত্তিতে বিভিন্ন সমিতির মাধ্যমে নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে।
এদিকে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের এ লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে পবিবোর ৭৯টি বিদ্যুৎ সমিতি। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি পল্লী বিদ্যুতের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের অধীনে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এতে উঠে আসে- শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য সংস্থাটির বিতরণ এলকায় ৪ লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৫ হাজার কি.মি. বিতরণ লাইন নির্মাণ হয়েছে। একই সময়ে ১ কোটি ৬২ লাখ গ্রাহক সংযোগও দেয়া হয়েছে। এর ছাড়া চলমান ১৫টি প্রকল্পের আওতায় ৮০ হাজার কি.মি. লাইন নির্মাণ ও কয়েক লাখ সংযোগের কাজ চলছে। অবশিষ্ট ৭৭ কি.মি. লাইন নির্মাণ বাকি আছে।
এ অবস্থায় শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নে বাকি এলাকাগুলোয় বিরতণ লাইন বসানোর জন্য পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলভিত্তিক দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের জন্য নেয়া প্রকল্পে ৩৯ হাজার ১০০ কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ, ৬১টি (৮৭০ এমভিএ) নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিদ্যমান ৯৭টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ৮৪৫ এমভিএ ক্ষমতা বর্ধন, ৩৯ সেট রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণ, ২৬.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ১টি সুইচ স্টেশন নির্মাণ এবং ১৩ লাখ ৭০ হাজার নতুন গ্রাহক সংযোগ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্ষমতা ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া প্রন্তিক এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা নিয়ে কুটির, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের বিকাশ ঘটবে, সেচের মাধ্যমে অধিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে এ খাতে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে শহর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য হ্রাস পাবে।
তিন লাখ ৪০ হাজার নতুন গ্রাহক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্পের উপ-পরিচালক (ডিপিডি) আদ্দুর রহমি মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘চলমান প্রকল্পের আওতায় আরো ৩ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক বাড়ছে। প্রকল্প এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গিয়েই সংখ্যাটি সামনে এসেছে। প্রতিনিয়তই জনসংখ্যা বাড়ছে, নতুন বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু কিছু চর অঞ্চলে সিদ্ধান্ত ছিল সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। কিন্তু এসব অফ-গ্রিড (চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকা) এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষকেও গ্রিডের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার। সুতরাং বাড়তি কাজগুলো বাস্তবায়নে আমাদের বাড়তি সময় ও অর্থ প্রয়োজন হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
এমআইএস/এজে