নিউক্লিয়ার সাইন্স নিয়ে লেখাপড়ার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে এসে মনোবল বেড়ে গেছে এই ছাত্র-ছাত্রীদের। এখানে তাদের পানি পরিশোধনসহ রেডিয়েশন মনিটরিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
রাশিয়ার সর্ববৃহৎ পরামাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নবভরোনেসের কন্ট্রোল সেন্টারে বর্তমানে ১৪০ জন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। রূপপুর প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়ার পর এদের এখানে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী রাশিয়ার মেফিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর লেখাপড়া করছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারি বৃত্তি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা মেফিতে লেখাপড়া করাচ্ছে। এদের বিশ্ববিদ্যলেয়ের কোর্স শেষ হওয়ার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর তাদের প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়ায় পাঠানো হবে।
১১ ডিসেম্বর নবভরোনেসের কন্ট্রোল সেন্টারে প্রশিক্ষণরত ১১ জন ছাত্র-ছাত্রীর একটি গ্রুপের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তাদের এখানে থিওরিটিক্যাল প্রশিক্ষণ কোর্স চলছে। এই কোর্স শেষ হলে তাদের পাওয়ার প্লান্টে প্রাক্টিক্যাল প্রশিক্ষণ হবে। এখানে তাদের পাওয়ার প্লান্টের পানি পরিশোধন পদ্ধতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সেফটি সিস্টেম, রেডিয়েশন মনিটরিং এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণের পর তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শতকরা ৭৫ ভাগ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
এদের মধ্যে রুহুল আমিন ও খাদিজা আক্তার বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলকে বলেন, আমরা ১১ জন এসেছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড আমাদের নিয়োগ দিয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য। আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কেমেস্ট্রি (রসায়ন) রিলেটেড বিষয়গুলো। যেমন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সার্কিটে যে পানি ব্যবহার করা হয় সেই পানির কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হয়। সেই কোয়ালিটি মেইনটেইন সংক্রান্ত ট্রেনিং এখানে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা), সেফটি সিস্টেম, রেডিয়েশন মনিটরিং এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এরপর নবভরোনেসের ৭ নম্বর ইউনিটে রিয়্যাক্টর পরিদর্শনের সময় সেখানে প্রশিক্ষণরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা হয়। এদের টিমে রয়েছেন ৯ জন। এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমে রিয়্যাক্টর অপারেশন (পরিচালনা) করার জন্য। এটি অত্যন্ত সেনসেটিভ (স্পর্শকাতর) বিষয়। এখান থেকে প্রশিক্ষণের পর এদের আবার বাংলাদেশেও (রূপপুর প্রকল্পে) রাশিয়ার এক্সপার্টরা (বিশেষজ্ঞ) হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন।
আল আমিন ও শহিদুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণে এসে আমরা এখন মনে করছি এটা এমন কোনো কঠিন কাজ না। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের দেশে বিষয়টি নতুন। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে যে বিভ্রান্তিটুকু আছে সেটা থাকবে না। হয়তো একটু সময় লাগবে। এটা এক সময় আমাদের মধ্যেও ছিল।
এদিকে এই নবভরোনেস প্রকল্পের ৭ নম্বর ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা জানালেন, এর রিয়্যাক্টর প্লান্টের কুলিং (ঠান্ডা করা) উচ্চতা ১৭০ মিটার। এখানে দুইটি ইউনিটের জন্য মোট তিনটি কুলিং টাওয়ার রয়েছে। দুইটি কুলিং টাওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে এবং একটি ব্যাকআপের জন্য রাখা হয়েছে। প্লান্টের গরম পানির বাস্প ১৫ মিটার উপর থেকে নামতে নামতে ঠাণ্ডা হয়ে নিচে নেমে আসে। তবে এই একই ধরন ও প্রযুক্তিতে তৈরি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুইটি ইউনিটের জন্য ৪টি কুলিং টাওয়ার থাকবে। তাপমাত্রা জনিত কারণে রূপুপুরের প্রতিটির জন্য দুইটি করে কুলিং টাওয়ার থাকবে।
নবভরোনেসের এই ৭ নম্বর প্লান্টের উপ-প্রধান প্রকৌশলী ইগর গুসেভ জানান, বাংলাদেশ এই ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এটা তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে এই ডিজাইন (ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর) বেছে নেওয়া। এতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ডিজাইনের প্লান্টে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও কোরক্যাচার নিরাপত্তার জন্য কাজ করে। জাপানের ফুকুসিমা পাওয়ার প্লান্ট যেটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল সেখানে এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি পরিবেশ বান্ধব। এর ম্যাটেরিয়াল, পানি, গ্যাস বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিরাপত্তার দিকটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণেই সর্বশেষ প্রযুক্তিটি বেছে নিয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়া পাঠানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
এসকে/এইচএডি/