রাশিয়ার প্রথম এবং সর্ববৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নবভরোনেস প্রকল্পে চাকরিরত এক ইঞ্জিনিয়ার দম্পতি এ তথ্য জানান।
তারা আরও জানান, প্রকল্পে যারা স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে চাকরি করেন, তাদের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বলা হয়।
এমন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির একজন হলেন তান্ত্রা। মস্কো নিউক্লিয়ার অ্যানার্জি ইনস্টিটিউট থেকে পাস করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে প্রশিক্ষণ নিয়ে নবভরোনেস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাকরি নিয়েছেন। গত ৫ বছর তিনি এখানে কাজ করছেন। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের চাকরিকে তিনি মর্যাদাপূর্ণ চাকরি মনে করেন। তার স্বামী অ্যালেক্সও এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে চাকরি করেন। দুজন একই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি শেষ করার পর তারা বিয়ে করেন। নিজেদের ইচ্ছাতেই তাদের বিয়ে হয়। তাদের জন্ম এই নবভরোনেস শহর থেকে ১৫শ’ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার অন্য একটি প্রদেশে। তারা দুজনই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার। রেডিয়েশন নিয়ে কাজ করেন। এই নবভরোনেস পাওয়ার প্লান্টে যারা কাজ করেন তাদের রেডিয়েশন মেজার করা হয়। তারা দুজনই রেডিয়েশন কন্ট্রোল সেন্টারে আছেন। রেডিয়েশন পর্যবেক্ষণ করা ও নিয়ন্ত্রণ করা তাদের কাজ। এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট সম্পর্কে এই দুই কর্মকর্তা জানান, এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। মানুষ এ বিষয়ে জানে না, তাই তাদের মধ্যে ভয় কাজ করে। তাবে মানুষকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হলে, তথ্য দেওয়া হলে ভয় থাকে না।
এই পাওয়ার প্লান্টে চাকরি সম্পর্কে তাদের অনুভূতি এবং নিজেদের পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তন্ত্রা বলেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে চাকরি করা সত্যি খুব সম্মানজক।
নবভরোনেস ইনফরমেশন সেন্টারে তান্ত্রার সঙ্গে কথা বলার সময় তার স্বামী অ্যালেক্স ও একমাত্র ছেলেও সেখানে ছিল। ছেলের বয়স চার বছরের মতো। ছেলেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-কেয়ার সেন্টারে রেখে তারা দুজনই অফিস করেন।
কথা প্রসঙ্গে তান্ত্রা ও অ্যালেক্স জানান, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কাজ করার আগ্রহ নিয়েই তারা এই বিষয়ের ওপর লেখাপড়া করেছেন। তাদের মতো এরকম অনেকেই আছেন। অল্প বয়স থেকেই রাশিয়ার অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে নিউক্লিয়ার পাওয়ার সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়।
এর আগে এখানে পারমাণবিক জাদুঘরে কথা হয় নবভরোনেস নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের সহযোগী পরিচালক তন্না কডারিয়াসকভের সঙ্গে। তিনিও রেডিয়েশন মেজার নিয়ে কাজ করেন। তিনি জানালেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কাজ করার জন্য তরুণরা বিশেষ করে শিশুদের (ছোটদের) মধ্যে খুবই আগ্রহ দেখা যায়। তরুণরা এখানে চাকরি নিতে চায়। তাদের কাছে এটা লোভনীয় চাকরি, সবাই এ চাকরিতে আসতে চায়। কিন্তু এখানে কাজ করার জন্য নিউক্লিয়ার সায়েন্সে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ সময় নবভরোনেসের ইন্টান্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার ইভগিনিয়া ভেলগলোগভা জেনি জানান, যারা এখানে কাজ করে বা করতে আসে তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর লেখাপড়া করে। তারা এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে নিজে থেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়া করে।
এ সময় তন্না কডারিয়াসকভ কথা প্রসঙ্গে আরও জানালেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট সম্পর্কে যে সব শিশুর আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্য চিত্রাঙ্কনসহ রোসটামের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে শিশুরা কীভাবে দেখে তাদের সেই অনুভূতির প্রকাশ ঘটনানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে চিত্রাঙ্কন। নিউক্লিয়ার পারওয়ার প্লান্ট ও এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে শিশুরা চিত্র আঁকে। তাদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিশুদের আঙ্কা চিত্র নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়। এতে তারা উৎসাহ পায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এসকে/এজে