ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের রফতানি সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে পোল্যান্ড

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপেন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
বাংলাদেশের রফতানি সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে পোল্যান্ড ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ওয়ারশ, পোল্যান্ড থেকে: এক সময়ের কমিউনিস্ট শাসিত পোল্যান্ড হতে পারে বাংলাদেশের জন্য রফতানি বাণিজ্যের সম্ভবনাময় দেশ। প্রয়োজন শুধু রাষ্ট্রীয় তৎপরতা ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ।



কমিউনিজমের পতনের পর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পোল্যান্ড এখন উন্নত বিশ্বের একটি দেশ। ২০০৪ সালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে যোগ দেওয়া মোট ১৫টি দেশের ১৪টির সমান পোল্যান্ডের জনসংখ্যা।  

এর আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ইইউ’র ষষ্ঠতম এই দেশটিকে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের নতুন লক্ষ্য হিসেবে এখনই নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করছেন পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

ট্যুরিজম বিষয়ক আন্তর্জতিক ফ্যস্টিভ্যাল ‘ফিল্মএট’ এ বিজয়ী বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাওয়ার্ড নিতে এসে বাংলানিউজের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এমনই সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।

দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পোল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ওমর ফারুককে ২০১০ সালে দূতাবাসহীন পোল্যান্ডে অনারারী কনসাল হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ সরকার।
 
দূতাবাস নেই ১৩ বছর:
সর্বমোট সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ বাঙালির বসবাস পোল্যান্ডে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম চললেও ২০০২ সালে বিএনপি-জামাত শাসনামলে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয় এটি। সেই থেকে দূতাবাসহীন অবস্থায় পোল্যান্ড সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ রেখেছেন সরকার নিয়োগকৃত অনারারী কনসালরা। দূতাবাস বন্ধ করা নিয়ে পোল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে অনেক ক্ষোভ ও হতাশা।

সম্প্রতি ওয়ারশ’র রেডিশন ব্লু  হোটেলের তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে দূতাবাস কার্যক্রম আবার শুরু হলেও ২০০২ থেকে ২০১৫ এই ১৩ বছরে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হারিয়েছে অনেক সুযোগ এমনই অভিযোগ পোল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।

অনারারী কনসাল জেনারেল ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, নতুন হাইকমিশনার হিসেবে শুক্রবার (১৯ জুন) ওয়ারশতে যোগ দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নর্থ আমেরিকান ডেস্ক প্রধান মাহফুজুর রহমান। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এর পক্ষে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০০২ সালে দূতাবাস থাকাকালীন পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ যেখানে ছিলো ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে এই মূহুর্তে এর পরিমাণ ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দূতবাস ছাড়াই যদি ২৫ মিলিয়ন থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারে উঠতে পারে রফতানি বাণিজ্য, তাহলে দূতাবাস থাকলে এর পরিমান কত হতো?

বাংলানিউজের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অনারারী কনসাল ওমর ফারুক নিজেই এর উত্তর দেন। তিনি বলেন, দূতাবাসের ধারাবাহিকতা থাকলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ আরও কয়েকগুন বেড়ে যেতো।
 
তৈরী পোষাকেই সম্ভব ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি পণ্য হিসেবে গার্মেন্টস, পলিথিন, রো জুট, লেদার, প্লাষ্টিক, শপিং ব্যাগ ও চা’র কথা বললেও এই মুহূর্তে শুধু গার্মেন্ট রফতানি করেই বাংলাদেশ আয় করতে পারে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও উপর, ওমর ফারুকের এমনই ধারণা। ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়লা উৎপাদক দেশ পোল্যান্ড থেকে বিনিয়োগ নেয়ারও বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, দেশটির মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৯৫ ভাগই উৎপাদন করা হয় কয়লা থেকে। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ খাতে পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ পেতে পারে যদি স্থানীয় দূতাবাসের মাধমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

তিনি বলেন, ২০০২ সালে কি কারণে যে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস বন্ধ হলো আমাদের এখানকার প্রবাসীরা আজ পর্যন্ত এখনও তা জানতে পারলো না।

তার দেওয়া তথ্যের স্বীকৃতি দিয়ে পোল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা পোল্যান্ডের বিশিষ্ট ব্যবাসায়ী কাজি এম সাইফুদ্দিনও বলেন বাংলানিউজকে।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশি পাইকারি কাপড় বিক্রেতা সাইফুদ্দিনের মতে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের অন্যতম বড় মার্কেট হতে পারে পোল্যান্ড। নিজের কারখানা ডননা ফ্যাসনস এর বিভিন্ন সেকশন ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমাদের দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা উন্নত দেশগুলোতে তৈরী পোশাক রফতানি করতে গিয়ে যে দরকষাকষির শিকার হন, নিজ বিনিয়োগে পোল্যান্ডে এটি করতে পারলে সেই দরকষাকষির তো সুযোগই ছিলনা, উপরন্তু লাভও করতে পারতেন অনেক বেশি। তার মতে বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা ঝুকি নিতে ভয় পান বলেই উন্নত দেশগুলোর দরকষাকষি সহজেই মেনে নেন, আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রমিকরা। স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে আসা কাজি সাইফুদ্দিন অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ পোল্যান্ডের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পোল্যান্ডকে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের জন্যে সম্ভাবনাময় একটি দেশ হিসেবেই মনে করি, এখন প্রয়োজন শুধু স্থানীয় দূতাবাসের পরিকল্পিত উদ্যোগ ও সরকারি তৎপরতা।
 
সারা পোল্যান্ডে প্রায় ৪থেকে ৫শত বাংলাদেশির বসবাস এমনটি জানালেন বাকালাস্কা এলাকার বাঙালি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন, আবু নাঈম ও নাজমুল হাসান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো শাখা না থাকলেও প্রতিবছর দেশের জাতীয় দিবশগুলো উদযাপন করেন পোল্যান্ড প্রবাসীরা। বৈশাখী মেলাসহ সাংস্কৃতিক উৎসবও হয় এখানে।

অনারারী কনসাল ওমর ফারুক জানান, স্কলারশীপ বা ওয়ার্কপারমিট নিয়ে এসে চাকরিসহ বৈধভাবে ৫ বছর বসবাস করতে পারলে রেসিডেন্ট পারমিট পাওয়া যায় পোল্যান্ডে। তবে এখানে নাগরিকত্ব পাওয়া একটু কঠিন বলেই জানালেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।