ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ কি বোঝে অভিদের প্রবাসে টিকে থাকার কষ্ট!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
বাংলাদেশ কি বোঝে অভিদের প্রবাসে টিকে থাকার কষ্ট! ছবি: অভিরাম চন্দ্র বিশ্বাসে/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এথেন্স (গ্রিস) থেকে: ভাগ্য অন্বেষণে এসে নিজেই গ্রিসে ‘দেশবন্দি’ হয়ে পড়েছেন টাঙ্গাইলের অভিরাম চন্দ্র বিশ্বাস।

অবস্থাটাই এখন এমন, পৃথিবীর সবদেশেই তিনি যেতে পারবেন, কেবল মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছাড়া।

তারপরও এ নিয়ে মনে কোনো খেদ নেই অভির। ‘নরসুন্দর’ হিসেবে তীব্র আর্থিক সঙ্কটের মুখে থাকা গ্রিসে কাজ করেন অভি।

রাজধানী এথেন্সের প্রাণকেন্দ্র ওমানিয়া দীপলারী থ্রি সড়কের একটি সেলুনে কথা হয় অভিরাম চন্দ্র বিশ্বাসের (২৮) সঙ্গে। সেখানে কমিশন ভিত্তিতে নরসুন্দরের কাজ করেন তিনি।

টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার শীতলপুর গ্রামের পরেশ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে অভি দেশেই কাজ করতেন। মানব পাচারকারী ও দালালদের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে অর্থনীতিতে দেওলিয়া হয়ে যাওয়া এ দেশে তার অবস্থান।

এখানেও দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় ৫টি বছর। পকেটে অর্থ থাকুক আর নাই থাকুক, নির্দিষ্ট সময়ে চুল তো কাটাতেই হয় মানুষকে। তাই অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে অতো মাথা ব্যথা নেই অভির। প্রতিদিন যে কাজ  হয় তার অর্ধেক পারিশ্রমিক হিসেবে পান তিনি। এখানে চুল কাটাতে সাধারণভাবে গুনতে হয় চার ইউরো। তবে দেশ থেকে আসা নতুন বাংলাদেশি বা বেকাররা তিন ইউরো দিলেই চিরুনি আর কাচি হাতে নিয়ে কাজে নেমে পড়েন।

এখানে তার আসা আর দালালদের খরচ নিয়ে অভিজ্ঞতাটি বেশ বিচিত্র। শোনালেন সেসব কথা, বেশ ভালো থাকার কথা বলে দালালরা তার কাছে থেকে নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। এতো টাকা অভিবাসন ব্যয় তুলতে অভির কতো বছর লাগবে, সেটা চিন্তা করলেও এখন কপালে ভাঁজ পড়ে তার।

তবে ভরসা গ্রাহকদের টিপস বা বকশিশ। সে হিসেবে মাসে হাজার থেকে ১২শ বা ১৩শ ইউরো আয় হয় অভির। থাকা-খাওয়া নিজের।

২০১২ সালে ভাগ্য অন্বষণে প্রবাসে পাড়ি জমান অভি। তাকে মানব পাচারকারী বা দালালরা প্রথমে নিয়ে আসেন দুবাই। সেখান থেকে ওমান, ইরান, তুরুস্ক হয়ে শেষে মন্দার এই দেশটিতে পৌঁছান তিনি।

তা সত্ত্বেও ভালো থাকলে না হয় ছিলো সান্ত্বনা। এক পর্যায়ে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে। দীর্ঘ সাত মাসের মাথায় ছাড়াও পান আন্তজার্তিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায়। সেখানে বয় কম থাকার সুবাদে কাজ আর থাকার সুযোগ পান তিনি। কাগজপত্র তৈরি করা হয় এভাবে যে, দেশে নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই দেশছাড়া তিনি। তবে শর্ত একটাই, কখনও বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না।

তাতে কি! টাকা পাঠাতে তো বারণ নেই। আসলে অভিরা শত বঞ্চনার মধ্যেও প্রবাস থেকে এভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান স্বদেশে। কিন্তু বাংলাদেশ কি বোঝে অভিদের বঞ্চনা আর প্রবাসে টিকে থাকার লড়াইয়ের কষ্ট!- দীর্ঘশ্বাস অভির মতো আরও ‍অনেকের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
এসএনএস

** বিদেশি সতীনেও কষ্ট নেই, আছে সুখ!
** ডিশ ওয়াশার থেকে ২ রেস্টুরেন্টের মালিক আকুল মিয়া
**জার্মানিতে বিয়ে বা দত্তক- এতে যায় কষ্টের বহু অর্থ
**পেট্রোলপাম্পেও নিজের কাজ নিজে করো নীতি
**সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে
**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’
** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!
** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি

** নিজেই মুমূর্ষু জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।