ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

রাস্তা চালু রেখেই দুর্ভোগহীন নির্মাণকাজ মস্কোয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
রাস্তা চালু রেখেই দুর্ভোগহীন নির্মাণকাজ মস্কোয় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মস্কো (রাশিয়া) থেকে: মস্কভা নদীর তীরে অবস্থিত পরিপাটি শহর মস্কো। প্রাচীন এই শহরটিতে প্রায় দেড় কোটি লোক বাস করেন।

রোড ডিভাইডারবিহীন প্রশস্ত রাস্তা, কোথাও কোথাও দুই রাস্তার মাঝ দিয়ে প্রায় ‍দুই লেন সমপরিমাণের বৃক্ষের সমারোহ।

দেখলে মনে হবে যেন, পাশাপাশি দু’টি রাস্তা। নিউ সিটি ছাড়া অন্যত্র সুউচ্চ ভবন খুব একটা নেই। নিউ সিটিতে  ট্রেডের জন্য বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ার কাজ চলছে।

শহরের সব রাস্তায় প্রচুর সংখ্যায় গাছপালা। প্রত্যেকটি রাস্তার উভয় পাশে পায়ে হাঁটার প্রশস্ত পথ রয়েছে। যা দিয়ে একসঙ্গে প্রায় দু’টি বাস অনায়াসে চলাচল করতে পারবে।

মস্কো শহরে পায়ে হাঁটার পথকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনের রাস্তায় পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। সে কারণে নির্ধারিত ফুটপাত বন্ধ। তবে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, রাস্তার যেদিকে নির্মাণ কাজ চলছে, সেদিকে পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পর্দার বাইরে কয়েক ফুট জুড়ে অস্থায়ী ফুটপাত চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।

অস্থায়ী ফুটপাতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে প্লাস্টিক ও স্টিলের রোড ডিভাইডার দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্মাণ কাজের কারণে কর্তৃপক্ষের দুঃখ পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই এখানে।

অনেকে হয়তো ভাববেন, প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে, সে কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। তেমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। অনেক রাস্তা রয়েছে, যেগুলোতে মাত্র দু’টি লেন রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে দ্বিমুখী চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে একমুখী করা হয়েছে।

বাংলাদেশে নির্মাণকাজ মানেই শুকনো মৌসুমে ধুলিঝড় আর বর্ষায় কাদায় একাকার। এখানে কিন্তু তেমনটি দেখা যায় না। পাশ দিয়ে গেলেও কেউ বুঝতেই পারবেন না যে, ভেতরে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। খোঁড়ার পর যে মাটি উদ্বৃত্ত হয়েছে, তারও কোনো নামগন্ধ নেই রাস্তায়। মাটি খননের সঙ্গে সঙ্গে বাইরে নিয়ে ডাম্প করা হচ্ছে। বাতাসের সঙ্গে মিশে সিটিকে নোংরা করার কোনোই অবকাশ নেই। আবার নিত্যদিনের বৃষ্টির পানিতে মিশে একাকার হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

প্রধান সড়কগুলো ঘুরে কোথাও রোড ডিভাইডার নজরে আসেনি। আর ঢাকার মতো মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের রণপ্রস্তুতিও নেই এখানে।

রোববার (২৯ মে) রেড স্কয়ার, ক্রেমলিন, লেনিন স্কয়ার এবং ট্যুরিস্ট জোন খ্যাত আরবাথ ঘুরে শুধু আরবাথ এলাকায় তিনজন সিটি পুলিশ সদস্যের দেখা মিলেছে।

আরবাথে রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্যের জনক খ্যাত আলেকসান্দর পুশকিনের ম্যুরালের সামনে সাদা চামড়ার একজন মাঝবয়সী লোক বিয়ার পান করে টলছিলেন। সিটি পুলিশ সদস্যরা ঢুলু ঢুলু ওই ব্যক্তির হাত থেকে বিয়ারের ক্যান নিয়ে অবশিষ্ট বিয়ার ফেলে দেয়ায় তিনি খালি ক্যান হাতে ধরে হুম হুম করে চলে গেলেন।

স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল এ শহরে খুবই কার্যকর। একটু অনিয়ম করলেই রক্ষা নেই। কেউ যদি অজান্তেও কোনো ভুল করে বসেন, তাতেও রক্ষা নেই।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রাশিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. বাহার পাটোয়ারি বাংলানিউজকে জানান, তার শ্বশুর লোকমান মিয়া এসেছিলেন বেড়াতে। তাকে নিয়ে সেভাস্তপোল মার্কেটে গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। যথারীতি শপিং করে বাসায় ফেরেন তারা। দু’দিন পর তার বাসার ঠিকানায় ছবিসহ জরিমানার স্লিপ চলে আসে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নির্দিষ্ট এলাকায় গাড়ি পার্ক করলেও যথাযথভাবে করেননি। গাড়ির যেদিকে সম্মুখভাগ থাকার কথা সেদিকে ছিল না। ফলে তাকে জরিমানা গুণতে হয়।

বাংলাদেশি এই ব্যবসায়ীর কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি যদি জরিমানা না দিতেন, তাহলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হতো?’ জবাবে জানালেন, ‘তারা কিছুই বলতেন না। বছর শেষে ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা গাড়ির লাইসেন্স নবায়ন করতে গেলে আটকে দিতেন’।

পথচারীদের জন্যও নিয়মটা অনেক কড়া। জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তা পার হলে সিসি ক্যামেরায় দেখে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে এক হাজার রুবল জরিমানা করতে পারেন। কখনো আবার জরিমানা না করে কাউন্সিলিং করেন। তবে এক্ষেত্রেও দিনটা মাটি হয়ে যাবে অভিযুক্তের। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই কাউন্সিলিংয়ের চক্করে পড়লে তার অফিস আওয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।

জেব্রা ক্রসিংগুলোতেও রয়েছে পৃথক সিগন্যাল। নিচে সুইচ রয়েছে। সুইচে চাপ দিলে গাড়ির জন্য লালবাতি আর পথচারীর জন্য সবুজ বাতি জ্বলে ওঠে (২৫ সেকেন্ড)।

কাদিগিনা রোডে পথচারী পার হয়ে যাওয়ার পরও গাড়ির জন্য লালবাতি জ্বলে থাকতে দেখা গেছে। পুরো রাস্তা তখন ফাঁকা থাকলেও গাড়ি ও দানবীয় গতিতে (১৪০-১৬০ কিমি) চলা বাইকগুলো থেমে ছিল। ১৮ লাখ রুবল মূল্যের (যা দিয়ে বাংলাদেশে একটি এলিয়েন ব্রান্ড নিউ কার পাওয়া সম্ভব) এই বাইকগুলো ঢাকার পথের বাইকের তুলনায় চারগুণ বেশি শক্তিশালী অর্থাৎ ৬শ’ সিসি পর্যন্ত রয়েছে। আর বুস্টার সেটিং করার কারণে বিকট আওয়াজ আগন্তুকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

অফিস আওয়ারে এখানেও কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য হচ্ছে মেট্রো সার্ভিস। গড়ে দেড় মিনিটের মাথায় মেট্রো পাওয়া যায়। অফিস টাইমে প্রায় ৪০ সেকেন্ড পরপর মেট্রোর দেখা পাওয়া যায়। মাটির নিচে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এই মেট্রো দিনে ৯৫ লাখ যাত্রী বহনে সক্ষম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
এসআই/এএসআর/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।