ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সমর্থক পর্তুগাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সমর্থক পর্তুগাল

লিজবন, পর্তুগাল থেকে:  অর্থনীতির ৮০ শতাংশই বিদেশিদের হাতে থাকায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কিছুটা সীমিত হলেও পর্তুগালের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঘনিষ্ট কূটনৈতিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কের কারণেই ১০/১২টি আন্তর্জাতিক ফোরামের নির্বাচনে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছে দেশটি।

তিনটিতে পর্তুগালকে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশও।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলোচনাকালে এসব মন্তব্য করেছেন পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমদ। রাষ্ট্রদূত বলেন, লিজবন মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ তাদের সবচেয়ে আবেগের স্থান ‘শহীদ দেশপ্রেমিক’ (Campo Martir da Patria) পার্কে বাঙালির ভাষাশহীদদের স্মৃতিসৌধ শহীদ মিনারের জন্য স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ দেয়। কমিউনিটির সহায়তায় শহীদ মিনার নির্মাণের পর গত দুই বছর ধরে একুশে ফেব্রুয়ারিতে পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে সেখানে।

গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকালে লিজবনে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজ কার্যালয়ে আলোচনাকালে স্থানীয় কমিউনিটির কাছে সজ্জন হিসেবে পরিচিত সিনিয়র এই কূটনীতিক বলেন, এ দেশটির পুরো অর্থনীতিই বিদেশি কোম্পানিগুলোর হাতে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিরাট আকারের বাণিজ্য সম্ভাবনা তাই সময় সাপেক্ষ। তবে ২০১২ সালের আগে পর্তুগাল-বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সীমাবদ্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১শ’ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এককভাবে পর্তুগালে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পর্তুগালের সঙ্গে রফতানি বাণিজ্যে টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা আছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘লিজবন পোর্ট দিয়ে পণ্য ঢুকলে স্থানীয় আইন অনুসারে প্রায় ২৬ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তবে স্পেনিশ বর্ডার দিয়ে এ পণ্য ঢুকলে কোনো ট্যাক্স নেই। আর তাই পর্তুগালের সঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রফতানির পরিমাণ অফিসিয়ালি ৭৫ মিলিয়ন ডলার হলেও দেশটিতে আমাদের ব্যবসা আছে ৩ থেকে ৪শ’ মিলিয়ন ডলারের’।

অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশি গার্মেন্টেসের মধ্যে ফ্যাশন গার্মেন্টেসের চাহিদা ইউরোপীয় দেশগুলোতে ৯০ শতাংশ। পর্তুগালও এর ব্যতিক্রম নয়। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও এক্সপেনসিভ নিজস্ব ব্র্যান্ড শাকুর ব্রাদার্স গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি গার্মেন্টস কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করছে’।

‘মার্কেট ছোট হলেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে পর্তুগাল একটি সম্ভাবনা হতেও পারে। পর্তুগালকে ভিত্তি করে স্থানীয়ভাবে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসার পরিকল্পনা নিলে ১/২ জেনারেশন পর এ অঞ্চলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার লাভ করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস’।

রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের পাট ও চামড়া শিল্পের সম্ভাবনা আছে পর্তুগালে। পাট রফতানিকারকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে এনকোয়ারিও পাই আমি।

বৈধ প্রক্রিয়ার মধ্যে পর্তুগালে বর্তমানে রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি। তাদের অনেকেই রেসিডেন্টস পারমিটের অপেক্ষায় আছেন। দেশটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশাবাদী রাষ্ট্রদূত।

পর্তুগাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে দূতাবাসের কিছু উদ্যোগের কথাও বাংলানিউজকে জানান রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পাবলিক লাইব্রেরি অব ইভোরা থেকে ১৭৪৩ সালে রচিত ও মুদ্রিত প্রথম বাংলা টু পর্তুগিজ ডিকশনারি’র কপি সংগ্রহ করেছি। সবার দেখার জন্যে সেটি আমাদের দূতাবাসে রেখেছি। ইউনিভার্সিটি অব ইভোরায় ‘সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’ চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আগ্রহও দেখিয়েছে। লিজবনের ওরিয়েন্টাল মিউজিয়ামে বাংলাদেশ কর্নার চালুর চেষ্টা হচ্ছে’।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর পর্তুগিজ ভাষান্তরও এখন প্রিন্টের অপেক্ষায় বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দূতাবাস কার্যক্রম শুরুর পর মে থেকে পর্তুগালে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী এই কূটনীতিককে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছে জার্মানিতে। শিগগিরই তিনি যোগ দেবেন তার নতুন কর্মস্থলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এসএপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।