ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

বেদুইনদের বাজার সাওক ওয়াকিফ

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
বেদুইনদের বাজার সাওক ওয়াকিফ বেদুইনদের বাজার সাওক ওয়াকিফ

দোহা, কাতার থেকে ফিরে: মে মাসের শেষ দিকে উত্তপ্ত শহর দোহা। দিনের বেলা এখানে কাজ ছাড়া বের হওয়ার কথা ভাবাই যায় না। হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলেই এয়ারকন্ডিশন। তবে এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যেন মাথার ওপর গরম লাভা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার পর দোহার মানুষ ঘুরতে বের হন।

দোহার ঐতিহ্যবাহী মার্কেট সাওক ওয়াকিফ সন্ধ্যার পর হয়ে ওঠে জমজমাট। মার্কেটে আসা আরব শিশুরা মা-বাবার হাত ধরে হেঁটে বেড়ায়।

মার্কেট চত্বরে স্কয়ারের মতো জায়গায় সমবয়সীদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে অনেক শিশু। শুধু কেনাকাটাই নয়, রাতের খাবার সেরে নেওয়ার জন্যে কিংবা সময় কাটাতে উৎকৃষ্ট স্থান সাওক ওয়াকিফ।

আরবিতে বাজারকেই বলা হয় সাওক। আর এই বাজারের ইতিহাস হাজার বছরের। এখানে আরব আর সিরিয়ার মরুভূমি পারি দিয়ে আসা বেদুইনরা পশু এবং পশুর পশম দিয়ে বানানো কাপড় নিয়ে আসতো বিক্রির জন্যে। বিনিময়ে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে যেতেন তারা।
বেদুইনদের বাজার সাওক ওয়াকিফসময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সাওক ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে। তবে ভাগ্য ভালো যে ২০০৪ সালে এই বাজারটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাতারের ঐতিহ্যবাহী নকশায় আগের গড়নেই রাখা হয় এই বাজার বা সাওক। আর এটাই মধ্যপ্রাচ্যে বাকি থাকা একমাত্র সাওক।

এখানে পথের দুই পাড়ে অসংখ্য দোকান। অনেক খাবারের দোকান। প্রাচীন সময়ে বেদুইনদের জন্যে থাকার সরাইখানাগুলো যেমন ছিল, তেমনই রেখে দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার না করা হলেও তেমনই রয়েছে। পথের ধারে অসংখ্য স্যুভেনিয়রের দোকান, খাবারের দোকান। আর দামি অ্যান্টিক তো রয়েছেই। এখানে স্যুভেনিয়রের মধ্যে ছুরি, তলোয়ারের খাপ, উট, উটের ক্যারাভান আর দামী পাথর রয়েছে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মশলার জন্যে যে এই মধ্যপ্রাচ্য বিখ্যাত তা দোকানগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। রয়েছে আরব ঘরনার কাপড়ের দোকান।
বেদুইনদের বাজার সাওক ওয়াকিফ
পথ ছেড়ে মার্কেটের ভেতর ঢুকলে তা যেন এক গোলক ধাঁধা। সরু গলির একটি থেকে আরেকটিতে গেলে অনেক সময় পথ হারিয়ে যেতে হয়। এখানকার পথ, দেয়াল, দোকান সবকিছুই বাদামি রংয়ের। সেখানে আলোর প্রতিফলন হয়ে এক মোহনীয় আবহ তৈরি হয়। কাতারে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ। তারকা হোটেল ছাড়া পশ্চিমারা পথের ধারে অ্যালকোহল পাবেন না। তাইতো কফি খেয়ে, শরবত পান করে বা শিশা নিয়েই বসতে হয়। আর কাতারি খাবার ছাড়াও ইয়েমেনি, ইরাকি, সিরীয় বা ভারতীয় খাবারেরও স্বাদ নেওয়া যাবে এখানে।

বিভিন্ন ফ্লেভারের শিশায় মৌ মৌ করছে চারপাশ। এর মাঝখান দিয়েই আমরা হেঁটে বেড়াই। এ বাজারে কার্পেটের দোকান প্রচুর।

এই সাওক থেকেই দেখা যায় আব্দুল্লা বিন জাইদ আল মাহমুদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার। স্থাপনাটি ফানার নামেই বেশি পরিচিত। এখানকার মসজিদের মিনারটি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই দেখা যায়। ২০০৯ সালে ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহাব মসজিদ নির্মাণের আগে পর্যন্ত এটি ছিল কাতারের সবচেয়ে বড় মসজিদ। তবে এখনও এটি উচ্চতায় সবচেয়ে উঁচু মসজিদ কাতারের।
বেদুইনদের বাজার সাওক ওয়াকিফ
সাওক থেকে বেশ সুন্দর আর ঝলমলে দেখায় ফানারকে। সন্ধ্যার পর পরিবেশটা একটু ঠাণ্ডা। আল জাসরা রোড ধরে অনেকেই আসছেন এখানে। আল আসমাখ এবং আল আহমেদ স্ট্রিটের মাঝেই এই সাওক অবস্থিত। তাইতো দুই পাশেই রয়েছে গাড়ির ভিড়।

এখানে শপিং করে যদি হাত ভরে যায় তা বহন করার জন্যে রয়েছে কুলি। কাতারে কুলিকে বলা হয় হামিল। সামান্য কিছু রিয়ালের বিনিময়েই ক্রেতাদের ভারী ব্যাগ গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এমএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।