রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে লালিম চাষ। লালিম দেখতে বাঙ্গির মতো হলেও এর স্বাদ ও গন্ধ তুলনামূলক বেশি।
বাজারে চাহিদা বাড়ায় ও দাম বেশি পাওয়ায় দিন দিন বাঙ্গির সঙ্গে লালিমের চাষ বাড়াচ্ছেন কৃষকেরা।
রাজবাড়িতে এ বছর ৫ কোটি টাকার বেশি বাঙ্গি ও লালিম বিক্রির আশা চাষিদের।
জেলা সদরের শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের ৭০ বছর বয়সী কৃষক গফুর কাজী এবারই প্রথম নিজের ১০ শতাংশ জমিতে করেছেন লালিমের চাষ। রোপণের দেড় মাসের মাথায় পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গফুরের ক্ষেতে এখন শোভা পাচ্ছে কাঁচা-পাকা সবুজ হলুদ রঙের লালিম। ইতোমধ্যে স্থানীয় হাট-বাজারে লালিম বিক্রি শুরু করেছেন গফুর।
এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার বেশি লালিম বিক্রি করেছেন বলে জানালেন গফুর। প্রতিটি লালিম আকার ভেদে ৩০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে লালিম চাষি আব্দুল গফুর কাজী বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজ করি। এখন আমার বয়স ৭০ বছর। দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় মাল্টাসহ আমি ধান,পাট,গম,পেঁয়াজ,রসুন, ড্রাগস ফল,মাল্টাসহ নানা ধরনের শাক-সবজি ও ফসলের চাষাবাদ করছি। এ বছর ফরিদপুর সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ থেকে বীজ নিয়ে আমার ১০ শতাংশ জমিতে লালিমের চাষ করেছি। বৈশাখ মাসের শুরুতে লালিমের চারা রোপণ করেছিলাম। দেড় মাস পরেই ফল ধরেছে। একেকটি লালিমের ওজন দেড় কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি লালিম আকার ভেদে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, লালিম একটি লাভজনক ফসল। অল্প খরচে কম সময়ে স্বল্প পরিশ্রমে ভালো লাভ হয়। প্রতি শতাংশে এবার প্রায় ৫০টি লালিম ধরেছে। সে হিসেবে ১০ শতাংশে ৫ শতাধিক লালিম ধরেছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকার মত বিক্রি হবে। এর মধ্যে আমার খরচ ৫ হাজার টাকা। আমার সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক লালিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
লালিম কিনতে ক্ষেতেই এসেছেন মো. রমজান খান। তিনি বলেন, গফুর কাজীর ক্ষেতের লালিম খেয়েছি। খেতে খুব মিষ্টি ও রসালো। তার কাছ থেকে পরিবারের জন্য লালিম কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই অঞ্চলের ফল বিষমুক্ত হওয়ায় সুনাম রয়েছে।
স্থানীয় আরেক কৃষক আলম শেখ বলেন, আমাদের এলাকার কৃষক গফুর কাজী লালিমের চাষ করে ভালো ফলন ও বাজারে ভালো দাম পেয়েছে। আমরাও আগামী মৌসুমে লালিমের চাষাবাদ করব।
কৃষানি চম্পা বেগম বলেন, এই গ্রামের চাষি আব্দুল গফুর লালিমের চাষ করেছেন। পাইকারেরা তার ক্ষেত থেকে লালিম কিনে রাজবাড়ী, ফরিদপুর,পাবনা জেলায় নিয়ে যাচ্ছে। অসময়ে এই ফল ধরেছে বলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। লালিম চাষ দেখা যাচ্ছে অধিক লাভজনক। আমরা ভবিষ্যতে লালিমের আবাদ আরও বাড়াব।
ফল ব্যবসায়ী মুন্না শেখ বলেন, আমরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কৃষকের উৎপাদিত ফল ফসল কিনি। চাষি গফুর কাজীর উৎপাদিত লালিম ভালো মানের হওয়ায় তিনি ভালো টাকা আয় করছেন।
গফুরের এই সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক কৃষক এখন লালিম চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। লালিম চাষে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও ফরিদপুর সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ।
আব্দুল গফুর কাজীর মতো উন্নত জাতের সুস্বাদু লালিম ও বাঙ্গির আবাদ করেছেন জেলার প্রায় ৫ শতাধিক চাষি। ভালো স্বাদ ও ক্ষতিকর কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় ক্ষেতেই ছুটে আসছেন স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার পাইকাররা।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় ৫৮ হেক্টর জমিতে হয়েছে বাঙ্গি ও লালিমের চাষাবাদ। হেক্টরপ্রতি ১৮ মেট্রিক টনের বেশি ফলনে মোট ১ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন বাঙ্গি ও লালিমের ফলন আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় ৫৮ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৭ মেট্রিক টন বাঙ্গি ও লালিমের আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০ হেক্টর ,কালুখালী উপজেলায় ১৩ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ৩ হেক্টর,বালিয়াকান্দি উপজেলায় ২ হেক্টর,গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি ও লালিমের আবাদ করেছেন কৃষকেরা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জনি খান বাংলানিউজকে বলেন, রাজবাড়ী জেলা সদরে চলতি মৌসুমে ৩০ হেক্টর জমিতে এ বছর বাঙ্গি ও লালিমের চাষ করেছেন কৃষকেরা। বাঙ্গির পাশাপাশি লালিমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। জেলা সদরের শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের কৃষক গফুর কাজী এবার ১০ শতাংশ জমিতে লালিমের চাষ করে ভালো ফলন ও দাম পাচ্ছেন। আমরা চাষিদের লালিমের চাষ বাড়াতে নানাবিধ পরামর্শ দিয়েছি। আশা করি এ জেলায় লালিমের চাষ দিন দিন আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৩
এসএএইচ