ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

২৮ লাখ টাকা কেজির চারাপিতা মরিচ এখন নোয়াখালীর ছাদবাগানে

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
২৮ লাখ টাকা কেজির চারাপিতা মরিচ এখন নোয়াখালীর ছাদবাগানে

নোয়াখালী: ‘আজি চারাপিটা’কে (চারাপিতা/ক্যারাপিটা) বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ। নোয়াখালী সদর উপজেলায় সাংবাদিক-শিক্ষক দম্পতির ছাদবাগানের দুর্লভ ১৪০ প্রজাতির  ফলদ ও ওষুধি গাছের মধ্যে মিলল বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ চারাপিতা।

 

দেখতে গোলাকার প্রতি কেজি চারাপিতা মরিচের দাম ২৬ হাজার মার্কিন ডলারের মতো। যা বাংলাদেশি টাকায় ২৮ লাখ টাকা।

দামি এ মরিচ গাছ দেখতে ওই সাংবাদিক-শিক্ষক দম্পতির ছাদবাগানে ভিড় করছেন উৎসুক অনেকে। তাদের মন্তব্য বাণিজ্যিকভাবে এ মরিচ চাষাবাদে অর্জিত হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা।

জেলার সদর উপজেলার কালিতারা বাজার এলাকায় তাদের দোতলা বাড়ির ছাদে ২০১৯ সালে শখের বশে বাগান গড়ে তোলেন স্থানীয় দৈনিক হাতিয়া কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক এম দিলদার উদ্দিন এবং তার স্ত্রী চরউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা ইমাম শিল্পী।

মাত্র চার বছরের মাথায় তাদের ছাদ বাগনে স্থান পেয়েছে পার্সিমন, পিচ  ফল, তিন  ফল, চেরি ফল, মালবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ট্যাং ফল, পিনাট বাটার, থাই গোলমরিচ, লবঙ্গ, কফি গাছ, লাল কাঠাল, চায়না লিচু, করোসোল, মিয়াজাকি আমসহ বিদেশি ২৫ জাতের আম, রাম্বুটান, অস্ট্রেলিয়ান মাল্টা, ভিয়েতনামি বেরিকেট মাল্টা, আপেল, মিশরীয় ডালিম, চুইঝাল, কমলাসহ ১৪০ ধরনের বিদেশি দুর্লভ ফলদ ও ওষুধি গাছ।

এর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর বিখ্যাত ও সুস্বাদু মরিচ ‘চারাপিতা’ সবার নজর কেড়েছে। যে মরিচের প্রতি কেজি বাজার দর প্রায় ২৬ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৮ লাখেরও বেশি।

সাংবাদিক দিলদার উদ্দিন জানান, ২০২১ সালে আমার মেয়ের আমেরিকা প্রবাসী শাশুড়ি দেশে বেড়াতে এলে তার ঢাকার বাসায় খাবারের সঙ্গে পেরুর দুটি ছোট গোলাকার মরিচ খেতে দেন। আমি খাবারের সঙ্গে ওই মরিচ না খেয়ে আমার ছাদবাগানে এনে চারা করি। সেখানে দুটি চারা গজায়। টানা পৌনে দুই বছর ধরে গাছ দুটিতে মরিচ ধরছে। এসব মরিচ নিজেরা খাই ও অন্যদের উপহার হিসেবে দিই। আগে জানতাম না যে এটি এতো দামি মরিচ। সম্প্রতি ইউটিউবে এ মরিচের ব্যাপারে জেনেছি।
 
সম্প্রতি ইউটিউবের মাধ্যমে এ দম্পতি জানতে পারেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ। এতে আশ্চর্য হন তারা। পরে গুগলে সার্চ করে জানতে পারেন, সুগন্ধি এ মরিচ মূলত ধনীরা ব্যবহার করেন। মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহ বা শেখেরা তাদের খাবারে এ মরিচ ব্যবহার করেন। ওই সব দেশের অনেক দামি হোটেলের রান্নায় এটি ব্যবহার করা হয়।  

পেরুতে চারাপিতা একটি বন্য মরিচ হিসেবে পরিচিত, এটি পেরুর জঙ্গলে চাষ হয়। ইদানিং এটি পেরুতে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য চাষ করা হচ্ছে। এ ক্ষুদ্র মরিচের একটি শক্তিশালী স্বাদ-সুগন্ধ রয়েছে। তবে এটি বেশির ভাগই বিভিন্ন খাবারকে কিছুটা মশলাদার করার জন্য গুঁড়ো আকারে ব্যবহৃত হয়। যদিও বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশে এখনও এটি অনেকটা অপরিচিত। ফাইভ স্টার ও সেভেন স্টার রেস্তোরাঁর বিভিন্ন রান্নায় অত্যন্ত স্বাদযুক্ত মসলা হিসেবে এর বেশ চাহিদা রয়েছে।

সাংবাদিক দিলদার উদ্দিন আরও জানান, এ মরিচ চাষের প্রসার ঘটাতে আমি আরও ২০টি চারা উৎপাদন করে টবে লাগিয়েছি। ধারণা করছি, আগামী এক মাস পর সবগুলো গাছেই মরিচ ধরবে। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে আরও ১০০টি চারা উৎপাদন করে আগ্রহীদের কাছে বিক্রি করতে পারব।  

সাংবাদিকের স্ত্রী সালমা ইমাম শিল্পী জানান, শখের বশে বাড়ির ছাদে বাগানটি করেছি। আমার স্বামী বাগানে দেশীয় প্রজাতির গাছের চারাকে প্রাধান্য না দিয়ে বিদেশি প্রজাতির প্রায় ১৪০টি দুর্লভ ফলদ ও ওষুধি গাছ লাগিয়েছেন। এর মধ্যে বাগানে সবচেয়ে দামি চারাপিতা মরিচ গাছ। এটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আধা পাকা হলে হলুদ ও পাকলে টুকটুকে লাল হয়। আকর্শনীয় এ মরিচ দেখতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছাদবাগানে ভিড় করে। আমরা বাগানের এ মরিচ আত্মীয়-স্বজন ও বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের উপহার দিয়ে তৃপ্তি পেতাম।

ছাদবাগান ও চারাপিতা মরিচ দেখতে আসা বেগমগঞ্জ উপজেলার হারুন অর রশিদ, মাইজদী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম পান্না ও ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন সজিব বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ চারাপিতা দেখে খুব ভালো লেগেছে। জীবনে এ দুর্লভ মরিচ দেখব, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। মরিচটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। এ দুর্লভ মরিচ আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে পারলে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, এ মরিচ আমাদের জন্য একেবারেই নতুন। পেরুর দামি এ মরিচ আমাদের নোয়াখালীর সাংবাদিক দিলদার তার ছাদবাগানে দুই বছর আগে থেকে চাষ করছেন। কোনো কৃষক এ মরিচ চাষাবাদে আগ্রহী হলে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হবে। আমরা চাই দুর্লভ এ মরিচ চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক।

ছাদবাগনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সম্পৃক্ত করে চারাপিতা মরিচ চাষাবাদে দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।