ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মুলধন উত্তোলন করার পরে প্রথম তিন বছর গ্রামীনফোণের লভ্যাংশ হু হু করে বাড়লেও এখন তা আর ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এটা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদরে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বিগত তিন বছরের প্রবৃদ্ধি ও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনায় এ তথ্য ফুটে উঠেছে।
কোম্পানিটির তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় গ্রামীনফোন লিমিটেড। একটি বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কমতি ছিল না। এছাড়া মোবাইল সেবা প্রদানেও কোম্পানিটির অনেক সুনাম ছিল। তাই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে বিনিয়োগ করে কি পরিমাণ বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যাবে তা না ভেবেই বুঝে না বুঝেই এর শেয়ার লুফে নিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু আগের তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় যে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছিল, চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধে তা লক্ষ্য করা যায়নি। মূলত অন্যসব অপারেটর ভালো সেবা ও কম কলরেট সুবিধা দেওয়ার ফলে গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। আর এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি পূর্ববর্তী বছরগুলোর প্রবৃদ্ধিও ধরে রাখতে পারছে না।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগের বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে গ্রামীণের বার্ষিক কর পরিশোধ-পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
এর পরের বছর ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। এসময় মোট ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার অফলোড করে প্রতিষ্ঠানটি।
এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কতোটা উপকৃত হয়েছেন তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৮১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করে। যা গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদনে যোগ হওয়ার কারণে এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা এক হাজার ১৯৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বেড়ে এক হাজার ৪৯৬ কোটি ৮১ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।
কিন্তু এর পরের বছর কোনো ধরনের প্রিমিয়াম আয় না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকায় নেমে আসে। তবে এর পরের বছর পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত মুলধনের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করায় মুনাফা বেড়ে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি ১১ লাখ টাকায় উঠে যায়।
তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পূববর্তী বছরে অর্জিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথমার্ধে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করে ৫২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যেহেতু টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠানের কোনো ‘অফ সিজন’ নেই, তাই প্রথম প্রান্তিকের এ ধারাবাহিকতা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে কম বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করে ৪৪৬ কোটি টাকার কিছু বেশি। ফলে চলতি বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা পূর্ববর্তী বছরের অবস্থানে ধরে রাখতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ, গত বছরের সমপরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে হলে গ্রামীণফোনকে বাকি ছয় মাস সময়ে ৯০০ কোটি টাকার ওপরে মুনাফা প্রয়োজন।
কিন্তু, দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক অবস্থা থেকে যে দৃশ্য পাওয়া যায়, তাতে আগামী ছয় মাসে ৯০০ কোটি টাকা অতিক্রম করা সম্ভব না হতে পারেও বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাই কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করতে না পারলে পরবর্তী প্রান্তিকের আর্থিক রিপোর্ট প্রকাশ করার পর তা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদরে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে শেয়ারদর ধরে রাখতে না পারলে, বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারেন বলেও মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১২
এইচএমএম/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com