খাগড়াছড়ি: ২০১১ সালের দিকে কথা। খাগড়াছড়ির খবং পুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বিমল ব্রত চাকমা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর দেখে আগ্রহী হন স্ট্রবেরি চাষে।
খাগড়াছড়ির লেমুছড়ি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক বিমল ওই বছরই কক্সবাজারের কৃষক মো. রেজাউলের কাছ থেকে এক হাজার স্ট্রবেরি গাছের চারা সংগ্রহ করেন। তার কাছ থেকেই জেনে নেন চাষ পদ্ধতি।
পরে জেলার মহালছড়ি উপজেলার কেয়াংঘাট ইউনিয়নের নিজ এলাকা করল্লাছড়িতে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন তিনি। ওই বছর আয় করেন আড়াই লাখ টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিমল ব্রত চাকমাকে। তিনি এখন একজন সফল স্ট্রবেরি চাষি। এ বছর খাগড়াছড়ির খবং পুড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর কোণ ঘেঁষে ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার স্ট্রবেরির চারা। তবে এবার স্ট্রবেরি চাষে তার সঙ্গী হয়েছেন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী ছোট মণি চাকমা।
আলাপকালে বিমল ব্রত চাকমা বলেন, আসলে একেবারে শখের বসে স্ট্রবেরি চাষ করি। প্রথম চাষে ফলন ভালো হওয়ায় পরে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ বাড়ে। নিজ এলাকায় টানা তিন বছর স্ট্রবেরি চাষ করেছি। মাঝখানে এক বছর বাদ দিয়ে এবার আবারো চাষ করেছি। এবার সাড়ে সাত হাজার স্ট্রবেরি চারা থেকে আড়াই লাখেরও বেশি টাকা আয় করেছি।
বিমল ব্রত চাকমার স্ট্রবেরি চাষ দেখে উৎসাহিত হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে মহালছড়ি মডেল পাইলট স্কুলের সহকারী শিক্ষক ডায়মন্ড খীসা অন্যতম। ২০১৪ সালে তিনি বিমল ব্রত চাকমার কাছ থেকে আটটি চারা সংগ্রহ করে বাসার সামনে রোপন করেন। ফলনও হয় ভালো। আর সেই আটটি গাছ থেকে তিনি দেড়শ’ চারা তৈরি করেন। আর সেই দেড়শ’ চারা থেকে এখন তার রয়েছে দেড় হাজার গাছের স্ট্রবেরি বাগান।
ডায়মন্ড চাকমা বলেন, শুরুতে এককভাবে স্ট্রবেরি চাষ করলেও এখন আমরা চার বন্ধু মিলে ১৫ শতাংশ জমিতে এই ফলের চাষ করেছি। গত বছর ৬০০ গাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি।
বিমলসহ অন্যান্য স্ট্রবেরি চাষিরা জানান, স্ট্রবেরি গাছের চারা এখনো সহজলভ্য নয়। তবে একটি গাছ থেকে বের হওয়া লতার উপরের অংশ থেকে বছরে অর্ধ শতাধিক চারা উৎপাদন করা সম্ভব। মাটিতে প্রচুর জৈব সার দিয়ে এই স্ট্রবেরি ফলাতে হয়।
যে জমিতে পানি জমে সেখানে এই ফল চাষ করা সম্ভব নয়। নভেম্বরের শুরুর দিকে স্ট্রবেরির চারা রোপনের সবচেয়ে ভালো সময়।
মহালছড়ির অপর এক চাষি সুশান্ত চাকমা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, স্ট্রবেরি গাছের অনেক পরিচর্যা করতে হয়। নভেম্বরে চারা রোপন করার ৪৫ দিন পর গাছে ফুল আসে। আর ফুল আসার একমাস পর লাল রসালো স্ট্রবেরি সংগ্রহ করার উপযোগী হয়।
তিনি বলেন, গাছ লাগানোর পর গোড়ায় প্রচুর খড় দেওয়া হয়। যা অনেক সময় জমিই ঢেকে ফেলে। এর থেকে গাছ ছত্রাক আক্রান্ত হলে ফলন ভালো হয় না। তাই প্রতিদিন এই গাছের যত্ন নিতে হয়।
এছাড়া জমিতে জৈব সার ব্যবহার করতে হয় বলেও জানান তিনি।
বিমল ব্রত চাকমা বলেন, এ মৌসুমে প্রতি কেজি স্ট্রবেরি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা ভালো হলে আরো ভালো দাম পাওয়া যেতো। আর ভালো দাম পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সম্ভাবনাময় ফল হতো স্ট্রবেরি।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানান, এখানকার আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী। ঠিকমতো যত্ন-আত্তি করলে ফলনও হবে ভালো। তবে বাজারজাত করার ব্যবস্থা ভালো না হলে স্ট্রবেরি চাষ লাভজনক হয়ে উঠবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
এসআই