রাজশাহী: কেবলই সপ্তাহ পূর্ণ করলো জ্যৈষ্ঠ। এরই মধ্যে বাজারের ঝুড়িতে উঠেছে বোম্বে জাতের লিচু।
বাজার ছেড়ে রাজশাহীর পথে প্রান্তরেও এখন শুধু লিচুরই সমাহার। লাল আভার বড় দানার রসালো লিচুগুলো সহজেই মন কাড়ছে পথচারী ক্রেতাদের। কিন্তু দামের কারণে ছুঁয়ে দেখার যেনো জোঁ নেই।
বোম্বে জাতের মোজাফফরপুরী প্রতি ১০০টি লিচুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া আকারে একটু ছোট লিচুগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।
ফলে দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় সাধ থাকলেও নগরীর সাধারণ মানুষের সাধ্য হচ্ছে না এসব লিচু কেনার। এতে লিচুর স্বাদ আটকা পড়েছে ব্যবসায়ীর ঝুড়িতেই। দামের কারণে বাজারে লিচু থাকলেও ক্রেতা নেই!
নগরীর শালবাগান, বিন্দুর মোড়, সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর ও স্টেশন বাজার ছাড়াও শিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে দর্শনীয় এ ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
ঝুড়ির মধ্যে চটের ভেজা বস্তা। তার ওপর সবুজ পাতায় মোড়ানো রক্তরাঙা লিচুগুলো এখন থোকায় থোকায় শোভা ছড়াচ্ছে। তাই মৌসুমী ফল হিসেবে অনেকে কিনছেন লিচু চড়া দামেই।
শালবাগান বাজারে কথা হয় সুলতানাবাদ এলাকার গৃহিনী আফরোজা বেগমের সঙ্গে। বললেন, ফলের মৌসুমে অন্য স্থানের চেয়ে এই বাজারে বেশি দোকান বসে। রয়েছে আড়তও। তাই দেখে-শুনে দর-দাম করে এখান থেকে ফল কেনা অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যের। কিন্তু বাড়তি দামে স্বস্তি মেলেনি এবার।
ছেলে-মেয়ের বায়না মেটাতে শনিবার লিচু কিনতে এসেছেন তিনি। কিন্তু দাম বেশি থাকায় ১০০টি লিচুর বদলে শেষ পর্যন্ত ৫০টি লিচু নিয়েই বাড়ির পথ ধরেছেন এই গৃহিণী।
চলতি সপ্তাহে সরবরাহ ভালো থাকলেও ব্যবসায়ীরা লিচুর দাম ছাড়ছেন না। একটা দাম বলেই গোঁ ধরে বসে থাকছেন। দর কষাকষির সুযোগও নেই।
তবে লিচু ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গেলো সপ্তাহে বাজার থেকে দেশি জাতের আটি লিচু শেষ হয়ে গেছে। টক-মিষ্টি লিচুগুলো এবার বেশিদিন ছিলো না। চলতি সপ্তাহে বাজারে বোম্বে জাতের বড় দানার লিচু উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু পুরোদমে এখনও লিচুর আমদানি শুরু হয়নি।
তাই বোম্বে লিচুর দাম একটু বেশি। আর ২/৩ দিনের মধ্যেই রাজশাহীর সব গাছ থেকে লিচু ভাঙা হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে লিচু বাজারেও আসতে শুরু করবে। এছাড়া বাজারে দিনাজপুর ও ঈশ্বরদীর লিচুও ভরপুর হয়ে উঠবে। তখন দাম সাধারণ ক্রেতাদের মুঠোয় চলে আসবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, লিচুর জন্য বিখ্যাত না হলেও রাজশাহী অঞ্চলে উৎপাদন হয় নানান জাতের লিচু। বৈচিত্র্যের কারণে সব লিচু একই সময় পাকে না। তবুও কেবল জ্যৈষ্ঠ মাসেই বাজারে থাকে এই অতিথি ফল।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহাকারী কৃষি কর্মকর্তা মমতাজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে লিচু চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি হয় চারঘাট ও বাঘায়।
রাজশাহী জেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে ৯ মেট্রিক টন লিচুর ফলন হয়। সেই হিসেবে জেলায় লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন। তবে মৌসুমের শুরু থেকেই প্রচণ্ড খরার কবলে পড়ে লিচু।
তীব্র তাপদাহে লিচু ফেটে গেছে। সেচ দিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি। তাই এবার ফলন কম হতে পারে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কম সময় গাছে ও বাজারে থাকে বলে বিজ্ঞানীরা লিচুকে অতিথি ফল বলেন। তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির মতো প্রতিকূল পরিবেশের পরও এবার রাজশাহীতে ফলন খুব একটা খারাপ হয়নি।
তিনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত বোম্বে, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু। রসালো এসব লিচুর উৎপাদনও হয় বেশি, দানাগুলো আকারেও দেখতে বেশ বড় হয়।
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে টক-মিষ্টি স্বাদের বারি-১ বাজারে আসে। যা আকারে বোম্বে বা মাদ্রাজি জাতের চেয়ে অনেক ছোট। এরপর বাজারে আসে বারি-২ ও বারি-৩।
এরই মধ্যে বাজারে এসেছে বোম্বে, চায়না-৩, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়িসহ অন্য জাতের লিচু।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, লিচু হজমের জন্য ভালো। লিচুতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকে, যা হজমের জন্য দারুণ কাজ করে। লিচুতে ফ্যাট কম থাকায় শরীরে ক্যালরি কম যুক্ত হয়। ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া লিচুতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্যানসার-প্রতিরোধী উপাদান আছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৬
এসএস/এমএ