ঢাকা: ফসলের চাষাবাদ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। সমস্যার সমাধানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা কৃষি অফিসে ধরনা দিতে হয়।
দেশের কৃষকরা এখন এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। ফসল চাষাবাদে সব ধরনের সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানায়’ নামের সফটওয়্যার ও অ্যাপসে। আগামী মাস থেকেই কৃষকের দোরগোড়ায় এর সেবা বিস্তৃত হতে থাকবে।
এতে মিলবে ১২০ ফসলটি উৎপাদনের যাবতীয় তথ্য। রোগ, পোকামাকড় দমন, যুগোপযোগী ও আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনসহ নানা তথ্যে ভরপুর এই সফটওয়্যার অথবা অ্যাপস ব্যবহার করে কৃষকরা অধিক ফসল উৎপাদন করতে সক্ষমতা অর্জন করবেন।
অ্যাপসটির মূল উদ্ভাবক বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসাইন সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাপসটি ব্যবহার করে জমিতে বা ঘরে বসেই কৃষকরা ফসল উৎপাদনে সব ধরনের তথ্য পাবেন। তাদের আর কষ্ট করে কৃষি অফিসে বা অন্যের কাছে সহযোগিতা চাইতে যেতে হবে না।
তিনি জানান, চাইলে নিজেদের এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবেন কৃষকরা। অ্যাপসে এসব কর্মকর্তাদের প্রোফাইল থাকবে। ব্লগের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের মতামত বিনিময় করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এতে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকবে না উল্লেখ করে এই কৃষিবিদ বলেন, এখানে কোনো গৎ বাধা তথ্য নেই। যা যা প্রয়োজন তাই আছে। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সারা দেশ থেকে গবেষকদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে তথ্য আপলোড করা হয়েছে। ফলে সর্ব্বোচ্চ মানের সেবাই পাবেন দেশের কৃষকরা।
এ অ্যাপসের একটি অফলাইন ভার্সনও করা হবে, যা মোবাইলে রাখতে পারবেন কৃষকরা। এতে ইন্টারনেট ছাড়াও ব্যবহার করতে পারবেন তারা। তবে আপডেট করার সুযোগ থাকবে।
অ্যাপসটি তৈরির বিষয়ে তরুণ এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে কৃষি সেবা নিতে আসতে হিমশিম খেতে হয় কৃষকদের। সঠিক তথ্যের অভাবে ফসল চাষে ভালো ফল পান না চাষিরা। এসব বিষয় মাথায় আসার পরই তিনি এ অ্যাপসটি তৈরির উদ্যোগ নেন। কৃষকদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতেই তার এই উদ্যোগ।
ইতোমধ্যে অ্যাপস তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় এ সফটওয়্যার ও অ্যাপসটি তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এর মাধ্যমে কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলায় পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে এর সফলতার পাশাপাশি ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ওই জেলার কাজীপুর ও চৌহালী উপজেলায়ও এর কার্যক্রম চলছে।
জুন মাসে উদ্বোধন করে দেশের কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এটি। কৃষিমন্ত্রীসহ সবাই অ্যাপসটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একমত হয়েছেন।
অ্যাপসটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করলেই সেবা পেতে শুরু করবেন কৃষকসহ অন্যরা। গুগল প্লে স্টোর থাকবে সেখান থেকে অ্যাপসটি পাওয়া যাবে। এছাড়া কেউ ইচ্ছে করলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকেও অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’য় প্রবেশ করলেই একটি পাতা বের হবে। সেখানে মূল পাতা, উৎপাদন পদ্ধতি, পোকা দমন, রোগ দমন, উন্নত প্রযুক্তি, অন্যান্য তথ্যাবলী, অনুসন্ধান নামে বিভিন্ন লিঙ্ক আসবে। প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট লিংকে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন বিষয়ের চিত্র চলে আসবে। সেখান থেকে কৃষকের প্রয়োজনীয় সমস্যা বা তথ্যের লিঙ্কে প্রবেশ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কৃষিবিদরা মনে করেন, উপজেলা পরিষদ থেকে যদি কৃষি বিভাগকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে অ্যাপসটি ব্যবহারের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এর সেবা খুব দ্রুত মাঠ পর্যাযে ছড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
একে/এএসআর